কেউ বলেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো, কেউ বা বলেন খেলার পেছনে এত টাকা খরচ না করে নিজের রাজকীয় জীবন করতে পারতেন, তবে বীরভূমের বড়গুনসীমা গ্রামের শেখ মহিম কে কী বললেন বা ভাবলেন, সেসব না ভেবে খেলা নিয়ে পড়ে আছেন। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল নিজে খেলোয়াড় হবেন, কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব এবং প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস হওয়ার ফলে স্বপ্ন পূরন হয় নি তাঁর।
২০১০ সালে অধিকৃত ৩০ বিঘা জমির ওপর আধুনিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু। এবার শেষ পর্যায়ে ধাপে ধাপে স্টেডিয়ামের গ্যালারি গড়ছেন শেখ মহিম। বসেছে ছ'টি ফ্লাড লাইটও। কলকাতার তিন প্রধানের ক্লাব তাঁবুর দেখাদেখি উন্নত ড্রেসিং রুম থেকে শুরু করে জিম, সব গড়ে দিয়ে শেখ মহিমের বর্তমান লক্ষ্য, গ্যালারিটা পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে গড়া। বলছেন, "এত খরচ, সুতরাং সব টাকা একসঙ্গে জোগাড় করা অসুবিধে। পরের ধাপে বাকিটা করব।" ইতিমধ্যে অবশ্য পাঁচটি গ্যালারি গড়া হয়ে গেছে।
কলকাতার বাইরে স্রেফ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া এমন স্টেডিয়াম, এবং তার গুণগত মান ও পরিকাঠামো দেখে অভিভূত সম্বরন ব্যানার্জী, সুব্রত ভট্টচার্য, দীপেন্দু বিশ্বাসরা। ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের প্রতিনিধি, সকলেই ঘুরে দেখেছেন স্টেডিয়াম। এবং সবাই অবাক শেখ মহিমের প্রচেষ্টা দেখে।
তিনি নিজে জানাচ্ছেন, "আমি সম্পন্ন কূষক পরিবারের ছেলে। প্রচুর চাষজমি, পুকুর, এসব আছে উত্তরাধিকার সূত্রে। নিজের ঠিকাদারির ব্যবসা এখন সুনাম পেয়েছে, নিজের ইটভাটাও আছে। যা রোজগার করি, যা আয় হয়, সব টাকা আমি স্টেডিয়ামের পেছনে খরচ করি। আমার স্বপ্ন এখানে ফুটবল ক্রিকেটের উন্নত কোচিং হবে, আমাদের গ্রামের ছেলেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে বড় স্তরে খেলে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। এটাই আমার স্বপ্ন, আর তার জন্য আমার সমস্ত আয় আমি মাঠে ঠেলে চলেছি।"
ইতিমধ্যে কয়েকবছর ধরে বার্ষিক ক্রিকেট ম্যাচ, আন্ত:জেলা ফুটবল প্রতিযোগিতা, এসবের পাশাপাশি কোচিং শিবিরও শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন দিন কমই থাকে যেদিন স্টেডিয়ামে খেলা থাকে না। চাষি, দিনমজুরদের গ্রামে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা এবং খেলায় অংশ নেওয়ার উদ্যোগ চালু করে অনেকটাই তৃপ্ত শেখ মহিম। গুনসীমা গ্রামে তাঁর নিজস্ব ক্রিকেট এবং ফুটবলের দল ছিল। সেই দলের নামই লোকমুখে স্টেডিয়াম ও দলের নাম হয়ে গোটা এলাকায় ছড়িয়েছে 'এমজিআর' হিসেবে। যেখানে 'এম' মানে মহিম, 'জি' মানে গুনসীমা, 'আর' হলো রয়্যাল। 'মহিম গুনসীমা রয়্যাল' বা এমজিআর দ্রুত ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে বাংলার ক্রীড়া মানচিত্রে, এমনটাই আশা মহিমের।