ভরা শ্রাবণেও জলের ঘাটতি! সেচের জলের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় চাষাবাদ করা করা যায় না বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের৷ গ্রামে চাষাবাদ করা গেলে এভাবে একসঙ্গে ন’জনকে চলে যেতে হত না বলেও দাবি গ্রামবাসীদের৷ গ্রামে কোনও কাজের ব্যবস্থা নেই বলেই পেটের টানে মহিলাদের বাইরে মাঠে কাজ করতে যেতে হত বলে অভিযোগ৷ আর তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে ন’জনের মৃত্যু হল৷
পেটের টানে গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চাষাবাদের কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা৷ কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের মৃত্যু হয়৷ ন’জনের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন৷ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও এই আদিবাসী আটজন মহিলা সহ অটোচালকের আর বাড়ি ফেরা হল না৷ বদলে তাঁদের শবদেহ চলে যায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য৷ বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের পর ওই ন’জন আদিবাসীর দেহ আসে তাঁদের বাড়িতে৷
মৃতদের আত্মীয় কলেজ হেমরম বলেন, ‘‘শ্রাবণ মাস শেষ হতে চলল, তাও গ্রামে জল নেই৷ কোনও ডিপ টিউবঅয়েলের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে আমাদের যে দু’-এক কাঠা জমি আছে, তাতে আমরা চাষ করতে পারি না৷ তাই ওঁরা বাইরে কাজে যায়৷ আমরা চাষাবাদ করতে পারলে এই ঘটনা ঘটত না৷ আশপাশের গ্রামের মানুষও কাজ করতে পারত৷ অন্যদিকে প্রায় তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ফলে গ্রামে অর্থাভাব যথেষ্ট।’’
মৃত ছাত্রীর দাদু বলাই হেমরম বলেন, “নাতনি কাষ্ঠগড়া হাইস্কুলে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। বাড়িতে অর্থাভাব রয়েছে। সেই জন্যই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে শ্রমিকের কাজে গিয়েছিল”। মৃত অন্তঃসত্বা বাসন্তী সরেনের নিকট আত্মীয় চুরকি টুডু বলেন, “এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি নেই। সেচ নালাতেও জল নেই। ফলে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। তাই সংসার চালাতে সাত মাসের অন্তঃসত্বা হয়েও কাজে গিয়েছিলেন”।
আরও পড়ুন রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রক্তাক্ত দেহ, বাস-অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু-মিছিল
যদিও এনিয়ে মুখ খোলেননি ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা৷ গ্রামজুড়ে শুধু কান্নার রোল৷ মুখ্যমন্ত্রী দু’লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন৷’’ বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা৷ খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই, আমাদের কার্যকর্তারা হাসপাতালে যান৷ কেন্দ্রীয় সরকারে তরফে দু’ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী দিনেও আমরা এই পরিবারগুলির পাশে থাকব৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘এঁরা এলাকায় কাজ পান না বলে বাইরে কাজ করতে যেতে হয়৷ শুধু এই গ্রাম নয়, বেশিরভাগ গ্রামের যুবক যুবতীরা পেটের টানে বাইরে চলে যান৷ সরকারের তরফে কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মনের দাবি, ‘‘বীরভূমে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ নেই৷ ফলে কাজও নেই৷ আর এই দুরবস্থায় সরকার মানুষের পাশে নেই৷ সরকার শুধু মৃত্যুর পরে চেক নিয়ে আছে৷’’ ন’জনের মৃত্যুতে এদিন বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র৷ গ্রামবাসীরা রান্না বন্ধ করে অরন্ধন রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে৷