Birbhum News: শরীরে ডাইনি ভর করেছে, এই অপবাদে এক গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে নাচানোর অভিযোগ উঠল মহিলা ওঝার বিরুদ্ধে। পুলিশ গ্রামে গিয়ে দুই ওঝাকে আটক করে। সেই সঙ্গে গৃহবধূকে উদ্ধার করে বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পাশাপাশি মহিলার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রামপুরহাট থানার মাসড়া অঞ্চলের তাতঁবাঁধা গ্রামের রায়পাড়া ও ভুঁইয়া পাড়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এক গ্রামের গৃহবধূ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। বহু চিকিৎসা করেও কোন ফল মেলেনি বলে পরিবারের দাবি। এরপরেই গ্রামবাসীরা ওঝার শরণাপন্না হন। ওঝা নিদান দেন গৃহবধূকে ডাইনি ধরেছে। সেই কারণে গ্রামেও রোগ জ্বালা বাড়ছে। তাকে সামনে এনে পুজো করলেই সব অসুখ সেরে যাবে। পুজোর জন্য মোটা অঙ্কের খরচ রয়েছে। সেই মতো দুই পাড়ার ৫০-৬০ ঘর থেকে চাঁদা তোলেন গ্রামবাসীরা। এরপরেই রবিবার সকালে সীমন্তবর্তি ঝাড়খণ্ড থেকে দুই ওঝা গ্রামে পৌঁছায়। গ্রামের হনুমান বেদিতে শুরু হয় পুজো। সেখানে নিয়ে আসা হয় ডাইনি সন্দেহে গ্রামের ওই গৃহবধূকে।
এরপর গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে সেখানে নাচানো হয়। ভিড়ে ঠাসা সেই দৃশ্য সকলেই উপভোগ করতে থাকেন। কিন্তু এই আদিম রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রামপুরহাট থানায় ফোন করেন গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ মির্ধা। খবর পেয়ে গ্রামে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। তারা লাঠিচার্জ করে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেয়। এরপরেই মহিলা এবং তার স্বামীকে উদ্ধার করে রামপুরহাটে নিয়ে যায়। মহিলাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
ওই গৃহবধূর ছেলে অজয় রায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মা মানসিক অবসাদগ্রস্থ ছিল। আমরা অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাই গ্রামবাসী মিলে ওঝা ডেকে রোগ দূর করাছিলাম। ওঝা আমাদের ভালোর জন্যই করছিল”।
গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ মির্ধা বলেন, “আমি খবর পেয়ে সেখানে যায়। দেখলাম এক গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে পুজোর নামে নাচানো হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করি। কারন গ্রামসুদ্ধ লোকের সামনে এভাবে কোন মহিলাকে অর্ধনগ্ন করা উচিত নয়। এরপরেই আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসে থানায় ফোন করি। পুলিশ ওঝাকে আটক করেছে। গৃহবধূ এবং তার স্বামীকে নিয়ে গিয়েছে”।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে একই অঞ্চলের বটতলা গ্রামে সুনীতা মুর্মু নামে এক কিশোরীকে বিবস্ত্র করে আশেপাশের আটটি গ্রাম ঘোরানো হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল সে ভিন সম্প্রদায়ের পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছিল। সেই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে মোবাইলে মোবাইলে ঘুরতে থাকে। এনিয়ে সারা দেশ তোলপাড় হয়ে যায়। কিশোরী পুলিশের কাছে অপরাধীদের চিনিয়ে দেওয়ায় তাকে পরের বছর সাহসিকতার পুরস্কার দেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। একই অঞ্চলে অনেকটা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় এলাকার মানুষের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রামপুরহাট মহকুমা শাসক সৌরভ পান্ডে বলেন, “দুই ওঝাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে”।