ফি বছরই অভিনব কায়দায় দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আলোড়ন ফেলে দেন এই ব্যক্তি। এবারও তার অন্যথা হয়নি। এবারও জল দূষণ রোধ এবং মাটি রক্ষার বার্তা দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন মালদার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিষ্ণু চন্দ্র সাহা।
প্রতি বছরই তাকলাগানো শিল্পকলায় দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে অভিনবত্ব রাখেন মালদার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিষ্ণু চন্দ্র সাহা। এবারও সেই ধারাই বজায় রেখেছেন তিনি।
কী দিয়ে এবার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন অবসরপ্রাপ্ত এই পুলিশ কর্মী?
বিষ্ণু চন্দ্র সাহা এবার ভুট্টার খোসা, খড়, ধানের তুষ, গমের ভুসি দিয়ে তৈরি করছেন দুর্গা প্রতিমা। ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে পাশ্চাত্য শিল্পের মেলবন্ধন তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। দুর্গাপুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। তার আগে একা হাতেই বিষ্ণু চন্দ্র সাহা জোর কদমে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মালদা শহরের কৃষ্ণ কালীতলা এলাকার বাসিন্দা বিষ্ণুচন্দ্র সাহা রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড পদে চাকরি করতেন। ৩ বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। চাকরিতে নিযুক্ত থাকাকালীনও সময় বের করে প্রতিমা তৈরি করতেন তিনি। এখন তো অবসর গ্রহণের পর হাতে ঢের সময় রয়েছে। তাই গত তিন বছর ধরে নজরকাড়া দেবীমূর্তি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
এবছর বিষ্ণুচন্দ্র সাহার হাতে তৈরি দেবী দুর্গা মালদা শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকার একটি বিগ বাজেটের পুজো মণ্ডপে দেখা যাবে। এবছর তিনি যে দেবীমূর্তিটি বানাচ্ছেন সেটিতে মাটির ব্যবহার হচ্ছে না। খড়, ধানের তুষ, গমের ভুসি এই তিন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মূর্তির কাঠামো। তার উপরে মাটির বদলে ভুট্টার খোসার প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। আঠা দিয়ে সেই কাঠামোর ওপর ভুট্টার খোসা লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে দুর্গাপ্রতিমা। প্রতিমার সাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুট্টার দানা ও ভুট্টার মঞ্জুরি।
আরও পড়ুন- “কে এক ভাইপো আছে তাঁর ৪ তলা বাড়ি”, বিচারপতি গাঙ্গুলির মন্তব্যে জোর চর্চা!
তাঁর এই কীর্তি প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিষ্ণুচন্দ্র সাহা বলেন, "নিজের চিন্তা থেকেই এমন প্রতিমা তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে। কয়েক বছর ধরেই মাটির বদলে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছি। এবছরও তাই অভিনব পরিকল্পনা। গত ৬ মাস ধরে এই প্রতিমাটি তৈরি করছি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০০ পিস ভুট্টা লেগেছে। মোট ৩০ কেজি ভুট্টা কিনেছি। এছাড়াও ভুট্টার গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিমা তৈরির কাজে।"
আরও পড়ুন- প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা, অভিষেকের আবেদনে ঐতিহাসিক রায়দান হাইকোর্টের
ভুট্টা দিয়ে প্রতিমা তৈরির চিন্তাভাবনার কারণ কী? উত্তরে শিল্পী বলেন, "ভুট্টা পচনশীল। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভুট্টা ও অন্যান্য সামগ্রী জলে পচে মাছের খাবার হবে। এই প্রতিমার বিসর্জনে জল দূষণ হবে না।" সুতরাং মাটি রক্ষার বার্তা এবং একইসঙ্গে পরিবেশের দূষণ রোধে সচেতন করা, অভূতপূর্ব এই ভাবনায় রয়েছে দু'য়ের মিশেলই।
বিষ্ণুচন্দ্র সাহা আরও বলেন, "ভূমি ক্ষয়, ভাঙনের জেরে ঠাকুর তৈরির জন্য এখন অনেক সময়েই পর্যাপ্ত পরিমাণে মাটি মেলে না। প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে অনেক মৃৎশিল্পীই হিমশিম খাচ্ছেন মাটির জোগাড় করতে। তাই এই বিকল্প ভাবনা।" এবছর বিষ্ণুচন্দ্র সাহার হাতে তৈরি দেবীমূর্তি মালদা শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির বাঘাযতীন ক্লাবে দেখতে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন- হঠাৎ হানায় চোখ কপালে পুলিশেরও! খাঁচা খুলতেই এরা কারা বেরিয়ে এল?