পুরসভার অধিবেশন কক্ষ, নাকি কুস্তির আখড়া হঠাৎ দেখলে তা বোঝা দায়। শনিবার দুপুরে অধিবেশনের মাঝে হঠাৎই কথাকাটা থেকে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপির কাউন্সিলররা। তৃণমূলের অসিম বসুর সঙ্গে বিজেপি-র সজল ঘোষ, বিজয় ওঝাদের ধস্তাধস্তি বাধে। কলার ধরে ধাক্কা-ধাক্কি চলে। একে অপরের উদ্দেশে কটূ কথা ছুড়ে দেন। শেষমেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামতে হয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে।
শনিবার কলকাতা পুরসভার তখন অধিবেশন চলছিল। সেই সময় বিরোধীদের কোনও প্রশ্ন ছিল না। ওই সময় চেয়ারপার্সন মালা রায় বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনাদের বিরোধীদের কেন কোনও প্রশ্ন থাকে না?'
জবাবে বিজেপি কাউন্সিলর সজল বলেন, 'বলেও কোনও লাভ হয় না। মেয়র-ডেপুটি মেয়র কোনও উত্তর দেয় না।'
এরপরই সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝার দিকে তৃণমূল কাউন্সিল অসীম বসু তেড়ে যান বলে অভিযোগ। তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, 'মেয়রকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করা যায় না।' এরপরই বাকযুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমশই তা গড়ায় হাতাহাতিতে। অভিযোগ, তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লে, মহেশ শর্মা সহ একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপি কাউন্সিলরদের উপর চড়াও হন। মারধরের অভিযোগ ওঠে।
এই হাতাহাতির সময় চেয়ারপার্সন মালা রায় উঠে বেরিয়ে যান। মেয়র, ডেপুটি মেয়র থামাতে গেলে তাদেরও ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই অবস্থা পুরসভার ইতিহাসে এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, 'চেয়ারপার্সন পক্ষপাতদুষ্ট। শাসক দলের কাউন্সিলর, তোলাবাজা কাউন্সিলর এসে মারধর করছে বিরোধীদের, আর চেয়ারপার্সন চোখ বুঝে চলে যাচ্ছেন। আর অসীম নব্য তৃণমূল, তাই নিজের শক্তি প্রমাণে এই ধরণের কাজ করল।'
তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু বলেন, 'কোনও ধাক্কা মারামারি কিছুই হয়নি। এটা ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া মাত্র। সজল ছোট ভাইয়ের মতো। ওকে মারব কেন? ওকে ভালবাসি। কিন্তু মাঝেমধ্যে ওর মাথা বিগড়ে যায়। ওঁর অভিযোগ মত সবাই মিলে ওঁকে মারলে সুস্থ হয়ে ঘুরে বেড়াতো? সবার দরকার নেই। আমি একাই একশো।'
চেয়ারপার্সন মালা রায় বলেন, 'শাসক বিরোধী উভয় কাউন্সিলরদেরই দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। মানুষ জনপ্রতিনিধি পুরসভায় পাঠান নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য। সেটা সকল সদস্যের মাথায় রাখা প্রয়োজন। যাঁরা আজ মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেই দুই কাউন্সিলরকেই শোকজ করা হচ্ছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে ব্য়বস্থা নেওয়া হবে।'
কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেছেন, 'যেটা হয়েছে সেটা লজ্জার ও দুঃখজনক। তবে যে বিরোধী কাউন্সিলর বলছেন যে তাঁকে মারধর করা হয়েছে, সেটা তাঁর উস্কানির ফলাফল, যদিও শাসক দলের কাউন্সিলরের সেই ফাঁদে পা দেওয়া উচিত হয়নি।'
আরও পড়ুন- এবার পুরী গেলে যাবেনই যাবেন এতল্লাটে! কোলাহলমুক্ত অপূর্ব এই প্রান্ত পুরীর নতুন আবিষ্কার