মঙ্গলবার ভোটগণনা তখনও আধবেলা পেরোয়নি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূলকে কংগ্রেসকে তুলোধনা করতে শুরু করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। ভাঙা বাংলায় অভিযোগ করেন, 'পশ্চিমবঙ্গে রক্তের রাজনীতি চলছে'। হাজারো বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনের নামে রক্তপাত আর প্রহসনের রাজনীতিকে 'তীব্র ধিক্কার' জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। জবাব দিতে দেরি করেননি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তিনি সম্বিত পাত্রকে 'ভণ্ড' বলেছেন।
তার ঠিক পরপরই ভেসে আসে পাশের রাজ্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অভিযোগ। তিনি অভিযোগের সুরে জানান যে তাঁর রাজ্যে আতঙ্কিত বিজেপি কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের আশ্রয় নেওয়ার কারণ, তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের নামে সন্ত্রাস চলছে। আর, শুধুমাত্র সেই কারণে বিজেপির ওই কর্মীরা ঘরছাড়া। পালটা, হিমন্তর অভিযোগকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ব্যাপারটাকে একটা 'রসিকতা' বলে দাবি করেছেন।
আর, ভোটগণনা মেটার পরপরই অভিযোগের সুর শোনা গেল পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের মুখে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েতে পরাজিত বিজেপি প্রার্থীরা অনেকে আতঙ্কে ঘরে ফিরতে পারছেন না। এক প্রার্থী তো নিশীথকে সামনে পেয়ে পা জড়িয়ে কেঁদেও ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, 'দাদা, আমি গ্রামে ফিরতে চাই। ভয়ে ফিরতে পারছি না।' নিশীথ জানিয়েছেন, ওই দলীয় প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভোট ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে যেখানে মৃত্যুর মিছিল দেখা গিয়েছে, তাতে বিজেপি তথা বিরোধী কর্মীদের জীবনহানির আশঙ্কাকে কেউই উড়িয়ে দিতে পারছেন না। স্বয়ং রাজ্যপাল থেকে শুরু করে তৃণমূলের বিধায়ক এবং নেতারাও পর্যন্ত এভাবে ভোট ঘিরে একের পর এক জীবনহানির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
তার মধ্যে রাজনৈতিক হিংসার কারণে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা। তার মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীরা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। সাফল্যও এসেছে বেশ কিছুটা। দিনহাটা মহকুমার ১ নম্বর ব্লকে লাল আবিরের জায়গায় দেখা গিয়েছে গেরুয়া আবির। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের গড় বলে পরিচিত দিনহাটার ভেটাগুড়িতে বিজেপি জয়লাভ করেছে।
আরও পড়ুন- মারকাটারি সাফল্য তৃণমূলের! তাও কোন আক্ষেপ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে মদনকে?
আরও পড়ুন- মরিয়া রাজ্যপাল, এবার ‘ধর্মযুদ্ধে’র ডাক সিভি আনন্দ বোসের
আরও পড়ুন- তুফান তোলা সাফল্য তৃণমূলের! তাতেও ‘মনমরা’ বাবুল! কারণটা জানালেন নিজেই
ফলে তাই খুশি নিশীথ প্রামাণিকও। তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, 'ভারতীয় জনতা পার্টির প্রত্যেক কর্মী-সমর্থক নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়েনি। এত সন্ত্রাস আর হিংসাকে ভয় পেয়ে তাঁরা সরে যাননি। এই জয় দলের সব কর্মীদের জয়। সব প্রার্থীদের জয়। এই জয় মানুষের জয়।'