Lok Sabha Election 2024: ভোট বড় বালাই! ফি বার নির্বাচন এলেই ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থী থেকে শুরু করে নেতা, অনেককেই বেশ চমক দিতে দেখা যায়। যেমনটা দেখা গেল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদকে (Kirti Azad)। যা দেখে টিপ্পনির বন্যা বইয়ে দিলেন প্রতিপক্ষ BJP প্রার্থী দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
ক্রিকেটের ময়দানে পরিচিতি পাওয়া কীর্তি আজাদ সম্প্রতি শক্তিগড়ে (Shaktigarh) ভোটের প্রচারে গিয়ে বনে গেলেন 'ল্যাংচা কারিগর'। ল্যাংচার দোকানে গিয়ে তিনি নিজের হাতে ছান্তা তুলে নিয়ে গরম তেলের কড়াইয়ে ভাজলেন ল্যাংচা। শুধু ল্যাংচা ভাজাই নয়, দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ল্যাংচার দোকানে বসে ল্যাংচাও খেলেন। আর এসব দেখে কীর্তি আজাদকে কটাক্ষে বিঁধে BJP-র প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বললেন, 'ড্রামা করে লাভ কিছু হবে না'।
ভোটের প্রচারে বেরিয়ে নানা সময়ে নানা রুপে অবতীর্ণ হচ্ছেন প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য শাসক ও বিরোধী প্রায় সবাই একই পথের পথিক। প্রচারে বেরিয়ে কখনও দলের কর্মীদের মন রাখতে আবার কখনও ভোটারদের মন পেতে প্রার্থীদের কত 'কাণ্ড'ই না করতে হচ্ছে! জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ নিতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই মন্দির, মসজিদ কিংবা গুরুদুয়ারায় গিয়ে প্রর্থীদের পুজো দেওয়া বা দোয়া-প্রার্থনা করা চলছে। এছাড়াও কোথাও গিয়ে ঢোল বাজানো আবার কোথাও গিয়ে আদিবাসী ধামসা মাদলের সঙ্গে নাচানাচিও রয়েছে। তারই মধ্যে সকালের চায়ের আড্ডাতো এখন একেবারে 'কম্পালসারি' হয়ে গিয়েছে। প্রাচারের এই অধ্যায়ে এবার জায়গা করে নিল কীর্তি আজাদের ল্যাংচা ভাজা।
বর্ধমান-দুর্গাপুর (Bardhaman-Durgapur) কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কীর্তি আজাদ বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের শক্তিগড় আর বড়শুলে নির্বাচনী প্রচার সারেন। এখানকার একের পর এক জায়গায় গিয়ে প্রচার চালানোর ফাঁকে তিনি শক্তিগড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে যান। সেখানেই সড়ক পথের দু’ধারে সার দিয়ে রয়েছে ল্যাংচার দোকান। সেখানে প্রচারের ফাঁকে একটি ল্যাংচার দোকানে ঢুকে পড়ে কীর্তি আজাদ ভাজলেন ল্যাংচা।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: ‘তৃণমূল ছাড়া কাউকে ভোট নয়’, ইদের মঞ্চ থেকে BJP-কে ধুয়ে দিলেন মমতা
ইতিহাস যদিও বলছে, মিষ্টান্ন “ল্যাংচা’ তৈরির নেপথ্যে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। বরং ল্যাংচার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বর্ধমান রাজবাড়ির এক প্রাচীন কাহিনী । বর্ধমানের এক মহারাজা বর্ধমানেরই এক মিষ্টান্ন কারিগরের কাছে ভাজা মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তখন ওই কারিগর তাড়াতাড়ি করে ছানা ও ময়দা সহযোগে রাজাকে এক রকম ভাজা মিষ্টি বানিয়ে দেন । সেই মিষ্টি খুবই সুস্বাদু হয়। রাজাও ওই মিষ্টি খেয়ে তৃপ্ত হন। কিন্তু মিষ্টিটির নামকরণ তখনও হয়নি।
তবে যেহেতু ওই মিষ্টান্ন তৈরির কারিগর খুঁড়িয়ে-লেংচিয়ে চলতেন, তাই তাঁর চলন অনুসারে ওই মিষ্টি ল্যাংচা নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। বর্ধমান রাজার পরিবারের কথা আজ শুধু ইতিহাসের পাতাতেই জানান দেয় । তবে ল্যাংচা আজও তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছে । যাতে আবার ছোঁয়া লাগল ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ কীর্তি আজাদের ।
যে দোকানে গিয়ে কীর্তি আজাদ ল্যাংচা ভাজেন, সেই দোকানের মালিক সুব্রত দত্ত খুবই খুশি ।তিনি বলেন, "ব্যাপারটা আমার বেশ ভাল লেগেছে ।শক্তিগড়ের কোনও ল্যাংচার দোকান মহানায়ক উত্তমকুমার খ্যাত। আবার কোনও দোকানে অভিনেতা প্রসেনজিৎ এসেছেন। এবারে আমিও কীর্তি আজাদ-খ্যাত বলতে পারব। আমার দোকানের প্রচার বাড়বে।" তবে এমন ভোট প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বাড়বে, কিনা বা গত লোকসভা ভোটে হাতছাড়া হওয়া বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি পুনরুদ্ধার হবে কিনা, সে উত্তর ভবিষ্যৎতই বলবে। তবে কীর্তির কলাপে শক্তিগড়ের ল্যাংচা ফের যে প্রচারের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যদিও এ নিয়ে কীর্তি আজাদকে কটাক্ষে বিঁধতে ছাড়েননি প্রতিপক্ষ BJP প্রার্থী দিলীপ ঘোষ । তিনি বলেন, “এসব ড্রামা করে কোনও কাজ হবে না। এখন ল্যাংচা ভাজছে, কালকে হয় সীতাভোগ ভাজবে। মানুষের সঙ্গে না মিশে একদিন ল্যাংচা ভেজে কিছু হবে না।"