বিজেপির লালবাজার অভিযানকে ‘কড়া’ হাতে প্রতিহত করল পুলিশ। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ- এই তিন কৌশলেই বিজেপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের রণংদেহী অবতার দেখে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হন দিলীপ ঘোষরা। লালবাজারে না গিয়েই শেষমেশ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকেই মূলত এদিনের কর্মসূচিতে ইতি টানেন দিলীপ ঘোষরা। ততক্ষণে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানের দাপটে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
লালবাজার অভিযান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আজকের আন্দোলন শেষ হল। ৫০ জনের বেশি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, পুলিশ জানিয়েছে সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আজকের মতো আন্দোলন শেষ। গোটা ঘটনা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানো হবে’’।
আরও পড়ুন: BJP Lalbazar Avijan Live: লালবাজার অভিযান শেষ, ঘোষণা দিলীপ ঘোষের
ঠিক কী ঘটেছে বিজেপির লালবাজার অভিযানে?
বুধবার রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে বিজেপির ধিক্কার মিছিল শুরু হয়। লালবাজারের কাছে যাওয়ার আগেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। সেসময়ই জল কামান দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে পুলিশ, ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল- এই জোড়া ফলাতেই মুহূর্তের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিজেপির মিছিল।
এদিকে, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মোড়ে বিজেপির মিছিলে উত্তজেনা ছড়ায়। ইট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, এসএস আলুওয়ালিয়া, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা।
বিজেপির লালবাজার অভিযান মিছিলে ধুন্ধুমার। জলকামান দিয়ে মিছিল আটকানোর প্রচেষ্টা কলকাতা পুলিশের#bjp #bjprally pic.twitter.com/n1FNKlwOp0
— IE Bangla (@ieBangla) June 12, 2019
এর আগে লালবাজারের গেটে পৌঁছে যান কয়েকজন মহিলা বিজেপি কর্মী। লালবাজারের সামনে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান মহিলা বিজেপি কর্মীরা। ‘ভারত মাতা কী’, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে শোনা যায় ওই বিজেপি মহিলা কর্মীদের। পরে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় দুই দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে আজ লালবাজার অভিযান করে বঙ্গ বিজেপি। ২০১৭ সালের পর আবার আজ কলকাতা পুলিশের সদর কার্যালয়ে অভিযান করে পদ্মবাহিনী। বিজেপির লালবাজার অভিযান রুখতে তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন। লালবাজার চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পাশাপাশি বিজেপির মিছিল আটকানোর জন্য মোতায়েন ছিল পুলিশের বিশাল বাহিনী। ড্রোনের মাধ্যমে চলে নজরদারি।
কী ঘটেছিল সন্দেশখালিতে?
গত শনিবার তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় সন্দেশখালি। এ ঘটনায় নিহত হন দুই বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল। হিংসার ঘটনায় নিহত হন আরেক তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লা। দেবদাস মণ্ডল-সহ আরও কয়েকজন কর্মী এখনও নিখোঁজ বলে দাবি বিজেপির। এ ঘটনার প্রতিবাদে গত সোমবার বসিরহাট মহকুমা এলাকায় বনধ ডাকে গেরুয়াবাহিনী। একইসঙ্গে সেদিন রাজ্যজুড়ে কালাদিবস পালন করে পদ্মশিবির। সন্দেশখালির ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সন্দেশখালিতে হিংসার নেপথ্যে রয়েছে বিজেপিই। তাঁর দাবি, ‘‘ওদের দু’জন মারা গিয়েছে। ওরাই প্রথমে কায়ুমকে মারতে গিয়েছিল। কোনও মৃত্যকেই সমর্থন করি না। নিজেদের গুলিতে মারা গিয়েছে, না কী হয়েছে, তা দেখতে হবে’’।