Advertisment

'টাটাদের তাড়ানোর দায় মমতার নয়', সিঙ্গুর ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই বিজেপির মাস্টারমশাই

দলীয় লাইনের উল্টো মত সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়কের!

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
BJP leader and former MLA Rabindranath Bhattacharya claims that Mamata government is not responsible for driving out Tatas from Singur , সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়ানোর দায় মমতা সরকারের নয় দাবি বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়র রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের

দল পাল্টালেও সিঙ্গুর ইস্যুতে এখনও মমতার পাশেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

ফের শিরোনামে জমি আন্দোলনের পীঠস্থান সিঙ্গুর। টাটা গোষ্ঠীকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে বর্তমান রাজ্য সরকারকে। এমনটাই নির্দেশ মধ্যস্থতাকারী ট্রাইবুনালের। এই নির্দেশের পরই বিরোধীরা টাটাদের সিঙ্গুর ছাড়ার দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে ফেলছেন। সত্যি কী সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি কারখানা না হওয়ার জন্য দায়ী তৃণমূলের আন্দোলন? এই নিয়েই মুখ খুলেছেন ২০০৬ সালে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির তৎকালীন সভাপতিও ছিলেন তিনি। সেই সময় তৃণমূলের প্রতীকে জিতলেও একুশের ভোটের আগে পদ্ম পতাকা হাতে তুলেছিলেন মাস্টারমশাই। সিঙ্গুর থেকেই বিজেপির হয়ে ভোট লড়লেও পরাজিত হয়েছিলেন আশিতিপর রবীন্দ্রনাথবাবু। এখন সক্রিয় না হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি ছাড়েননি সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক। ভিন্ন দলে থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাফ দাবি, 'সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়ানোর দায় মমতা সরকারের নয়।' অর্থাৎ সিঙ্গুর নিয়ে দলীয় লাইনের ভিন্ন মত মাস্টারমশাইয়ের।

Advertisment

'দায় মমতার নয়'

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কথায়, 'সিঙ্গুর থেকে ন্যানো বিদায়ের ফলে শুধু সিঙ্গুরের নয়, সমগ্র রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে। টাটা চলে যাওয়ার পর রাজ্যে আর কোনও শিল্প আসেনি। তবে ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও ওই দায় এই সরকারের ছিল না। পূর্বতন বাম সরকারের খেসারত এই সরকারের উপরে চাপানো হয়েছে।'

'আন্দোলন টাটাদের বিরুদ্ধে নয়, বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে'

'বাম সরকার জোর করে জমি নিয়ে কারখানা গড়ছিল। আমরাও সে সময় আন্দোলন করেছি। সেটা জোর করে জমি অধিগ্রহণ এবং পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। রাজ্যপালের মধ্যস্থতার সময় মমতা বলেছিলেন যাঁরা নিজেদের ইচ্ছায় শিল্পের জন্য জমি দিয়েছেন, সেই ৭০০ একর মত জায়গায় শিল্প হোক। বাকি জমি অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু তৎকালীন বাম সরকারের পলিটব্যুরো ওই চুক্তি বাতিল করে দেয়। তাই টাটা চলে যাওয়ার দায় মমতার নয়, বাম সরকারের।'

সিঙ্গুরে কেন জমি আন্দোলন?

'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ', এই স্লোগানকে সামনে রেখেই ২০০৬ সালে বাংলায় সপ্তমবারের জন্য গঠিত হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। বিপুল জয়ের পরই সিঙ্গুরের টাটাদের ছোট গাড়ি শিল্পের কারখানা হওয়ার ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুরু হয় ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ। বেরাবেড়ি, খাসেরভেড়ি, সিঙেরভেড়ি, বাজেমেলিয়া, গোপাল নগরের মোট পাঁচটি মৌজার জমিকেই কারখানা গড়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু, ওই এলাকার বহু জমি মালিক ও ভাগ চাষী জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। জোর করে তারা জমি দেওয়ার প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদ আন্দোলনের রূপ নেয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

কারখানার কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও আন্দোলনের ফলে ২০০৮ সালে সিঙ্গুর থেকে কারখানা গুটিয়ে গুজরাতের সানন্দে চলে যায় টাটা মোটরস। জমি আন্দোলনের উপর ভর করে ২০১১ সালে বাংলার ক্ষমতায় পালাবদল ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টেও জানিয়ে দেয়, সিঙ্গুরে কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ পদ্ধতি সঠিক ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মত, কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেয় তৃণমূল সরকার।

অরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ

সিঙ্গুরে টাটা বিদায়ের ১৫ বছর কেটে গিয়েছে। সোমবার সালিশি আদালত নির্দেশে জানিয়েছে, টাটারা সিঙ্গুরে কারখানা গড়তে যে টাকা লগ্নি করেছিল, তা সুদসমেত ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাদের রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।

এখন কী বলছেন সিঙ্গুরবাসী?

গোপাল নগর মৌজার কৃষক গোপাল সামন্ত বলেন, 'এটা রাজনীতির খেলা। দলবাজি হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে আমাদের জমি ফেরত দিয়েছে। তারা মেনে নিয়েছিল অন্যায় ভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাহলে আবার টাটার ক্ষতিপূরণ কিসের? এটাই আমরা বুঝতে পারছি না।'

আরও পড়ুন- সিঙ্গুরে টাটাকে ক্ষতিপূরণ! এরপরও শিল্প সম্মেলন থেকে বিরাট আশা মমতা সরকারের

আরও পড়ুন- একলাফে দ্বিগুণ হল দাম, পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে জল মধ্যবিত্ত বাঙালির

tmc bjp Mamata Banerjee singur CPIM Buddhadeb Bhattacharya Rabindranath Bhattacharya Singur Movement Tata Motors Tata nano
Advertisment