মণিপুরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। চাঁচাছোলা মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ 'বিজেপি বেটি বাঁচাও স্লোগান দিয়ে বেটিদের জ্বালানো হচ্ছে'। এর মধ্যেই বাংলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়!
Advertisment
শুক্রবার ২১শে জুলাইয়ের সভার পর দিল্লিতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে লকেট চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় বাংলায় নারী নির্যাতনের ছবি তুলে ধরেন হুগলির সাংসদ। তখনই তাঁকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বলেন ছোট ঘটনা, পুলিশ আমাদের অভিযোগ নেয় না। মা - বোনেদের বাঁচাতে আমরা কোথায় যাব?'
লকেটের প্রশ্ন, 'ভিডিয়ো ভাইরাল হলে তবেই কি আমরা এই ধরণের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলব?' বিজেপি সাংসদের দাবি, 'কংগ্রেসও মমতার অপরাধে সামিল। সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী চুপ কেন? বাকি রাজ্যে গিয়ে এরা কান্নাকাটি করে। কিন্তু বাংলা নিয়ে এরা মুখ খোলে না। অধীর চৌধুরীকে জিজ্ঞাসা করুন, ওর এলাকায় তৃণমূল কেমন অত্যাচার করছে।'
হুগলির সাংসদের সংযোজন, 'একের পর এক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হয়েও চুপ। আপনারা বলুন, আমরা কোথায় যাব? আমরাও মহিলা। আমরা চাই আমাদের মেয়েদের কোনওভাবে বাঁচাতে। আমরাও এই দেশেরই মেয়ে। পশ্চিমবঙ্গ দেশের বাইরে নয়। আমাদের এফআইআর নেয় না পুলিশ। অনেক কষ্টে পাঁচলা ও ডোমজুড়ের ঘটনায় অনলাইনে আজ এফআইআর দায়ের করা গিয়েছে।' এরাজ্যে নারী নির্যাতনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনায় আমাদের মহিলা কর্মীকে চুলের মুঠি ধরে টেনে গণনাকেন্দ্রের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল তৃণমূলের গুন্ডারা। আমরা কিচ্ছু করতে পারিনি। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। পুলিশকে বললাম। পুলিশ বলল, আপনি এখান থেকে চলে যান।'
এ রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকেও কাঠগড়ায় তোলেন লকেট। বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীকে জানালে উনি বলেন, এগুলো ছোট ঘটনা। পঞ্চায়েত ভোটে ৫৭ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার পর মুখ্যমন্ত্রী বয়ান দিলেন, পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। ছোটখাটো কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণের সময় বলেছিলেন ছোট ঘটনা, প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক ছিল বলেছিলেন। প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক থাকলে কাউকে অত্যাচার করে মেরে ফেলা যায় না কি?'
লকেটের অভিযোগ, 'রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের নামে লুঠ হয়েছে। পাঁচলায় আমাদের মহিলা কর্মীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গোটা রাজ্য মহিলাদের ওপর নির্যাতন চলছে। আমরা কোথায় যাব? আমরা কেন্দ্রকে বলি। কেন্দ্র তদন্ত করে, রাজ্যের তরফে কোনও সহযোগিতা করা হয় না।'
এদিকে, পাঁচলার এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য এদিন বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে ১৩ জুলাই হাওড়া গ্রামীণ পুলিশে বিজেপির তরফে ইমেলে অভিযোগ করা হয়। এক ভদ্রমহিলার অভিযোগ ছিল ৮ জুলাই ভোট চলাকালীন বেলা ১১টার সময় ওঁকে বুথ থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। ওঁর কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন ওখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, প্রচুর পুলিশও ছিল। কেউ বলেনি এমন ঘটনা কেউ শুনেছে।'
ডিজি আরও বলেন, 'তবু আমরা ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওঁরা গোপন জবানবন্দি দেননি। ওই মহিলার আঘাত লেগেছে বলে বলা হচ্ছে। আমরা চিকিৎসার নথি চেয়েছি। এখনও সেই নথিও আমাদের কাছে পৌঁছোয়নি। এই ধরনের কোনও অভিযোগ এলে পুলিশের তরফে পদক্ষেপ করা হবে।'