আইনি জটে আটকে গেল বিজেপির রথযাত্রা। বিজেপি-র রথ তথা গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপর শুক্রবার স্থগিতাদেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ এবং মামলাটি ফের সিঙ্গল বেঞ্চেই বিচারের জন্য ফেরত পাঠানো হল। বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে বিজেপির এই কর্মসূচিতে অনুমতি দিয়েছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চ। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ বলে, রাজ্যের জমা করা গোয়েন্দা রিপোর্ট খুলে দেখা উচিত ছিল সিঙ্গল বেঞ্চের, কিন্তু সেখানে এই রিপোর্ট দেখাই হয়নি। এরপরই মূল মামলাটি ফেরত পাঠানো হয় সিঙ্গল বেঞ্চে।
শুক্রবারের এই থগিতাদেশের পর বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার সূচি বদলাতে পারে। তাঁরা অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন দিলীপ। এদিন পুলিশের হয়ে আদালতে সওয়াল করেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। সিঙ্গল বেঞ্চ যে গোয়েন্দা রিপোর্ট খুলেই দেখেনি, সে বিষয়টি তিনিই উত্থাপন করেন। আর এই সওয়ালের পরই রাজ্যের অনুকুলে ঘুরতে থাকে মামলা। এদিকে, আগামিকাল অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বড়দিনের ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে, ফের কাজ শুরু হবে জানুয়ারি মাসে। ফলে, বিজেপি-র রথ আপাতত বিশ বাঁও জলে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে বিজেপির রথাযাত্রার বিষয়ে আলোচনা করতে ১৫ ডিসেম্বর লালবাজারে বৈঠকে বসে রাজ্য প্রশাসন ও বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। এরপর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হতে পারে বলে বিজেপির-র এই কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া সম্ভব না বলে আদালতে জানিয়ে দেয় রাজ্য। এই মামলার শুনানির সময় রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করতে উঠে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হয়েছে এবং সে জন্যই অনুমতি দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু, বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী রাজ্যের এই দাবি মানতে চাননি। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার 'যান্ত্রিকভাবে' বিজেপির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এরপরই তিনি রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা তথা রথযাত্রায় শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেন। রাজ্যকে বিজেপি-র এই কর্মসূচির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, বিজেপি-কে বলা হয়, তাদের এই কর্মসূচিতে যাতে সাধারণ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে এবং কোনও গন্ডগোল হলে সেই দায় সমানভাবে বিজেপির উপরও বর্তাবে। পাশাপাশি, প্রতিটি জেলায় রথযাত্রা প্রবেশের ১২ ঘণ্টা আগে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।