'পার্টি উইথ ডিফারেন্স', বিজেপির শৃঙ্খলা নিয়ে প্রায়ই এই দাবি করেন দলের নেতা, কর্মীরা। কিন্তু, গত কয়েকদিন ধরে যা চলছে তা নজিরবিহীন। বুধবার সল্টলেকের পর বহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতর মুরলিধর সেন লেন উত্তাল হল। বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগে করলেন দলেরই জেলা নেতাদের একাংশ। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। একসময় দেখা যায় বীরভূম থেকে আসা ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা দলের রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সহ একাধিক নেতার ছবিতে জুতোপেটা করছেন। মাটিতে নেতাদের ছবি ফেলে লাথিও মারছেন!
এ দিন দুপুরে মুরলিধর সেন লেনে জড়ো হন বীরভূমের বিজেপি নেতা কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ নামে একটি সংঠনের আহ্বায়ক সামসুর রহমান। সঙ্গে ছিল দলের নেতাদের পোস্টার। সুকান্ত মজুমদারের ছবির নীচে লেখা ছিল 'কাঠের পুতুল সুকান্ত মজুমদার গো ব্যাক', সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তীর নামের নীচে লেখা ছিল 'দালাল'। প্রথমে বিক্ষোভ, তারপর সেই আঁচ বাড়াতে দলীয় নেতাদের ছবিতে জুতো মারতে দেখা যায় বিজেপি কর্মীদের। এমনকী লাথি মারতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলেও এই ছবি তুলে ধরে গেরুয়া দলকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
প্রায় ঘন্টা চারেক নাগাড়ে এই বিক্ষোভ চলে। তাৎপর্যপূর্ণ হল যে, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই দিলীপ ঘোষের আমলে দলের কোনও না কোনও পদে ছিলেন বলে পদ্ম শিবির সূত্রে খবর।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'বীরভূমে তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাত করে কয়লা আর পাথর পাচারের টাকার ভাগ নিচ্ছে জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। তাঁর মাথায় অমিতাভ চক্রবর্তীর হাত রয়েছে। তাই বলে কেউ কিছু করছে না। সেই টাকার ভাগ রাজ্য ভবনেও আসছে। বারে বারে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি।' অন্য এক বিজেপি বিক্ষোভকারী বলেছেন, 'তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সেটিং করেছেন সুকান্ত মজুমদাররা। যাঁরা টাকা দিচ্ছেন তাঁরাই বাড়িতে বসে দলে জেলার পদ পাচ্ছেন। আর আমরা পুরনো কর্মীরা বসে রয়েছি। সুকান্ত মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তীদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি তদন্তের দাবি করছি।'
প্রায় রোজই রাজ্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে রোষের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে। অস্বস্তি বাড়ছে গেরুয়া বাহিনীর। যা মেনে নিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, 'দলীয় দফতরের সামনে কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এটা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। আমরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।' মুরলীধর সেন লেন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বিক্ষোভকারীদের সনাক্ত করে পদক্ষেপ করতে পারে রাজ্য বিজেপি।