হাসপাতালে পরিষেবার দৈন্যদশার কথা বলতে গিয়ে তৃণমূলের মিছিলে পর্যন্ত হাঁটলেন খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। সৌজন্যে তৃণমূল কংগ্রেসের 'দিদির দূত' কর্মসূচি। এনিয়ে যখন বিতর্ক চরমে, সেই সময় আবার এই কর্মসূচিকে ঘিরে বিতর্ক বাড়ালেন বীরভূমের মুরারইয়ের বিধায়ক মোশারফ হোসেন নিজেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামে গিয়েই সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে বিধায়ক কোনও কথাই বলেননি। কখনও চারচাকার গাড়িতে চেপে, কখনও বা দলীয় কর্মীর বাইকে রাস্তা দিয়ে হুস্ করে বেরিয়ে গিয়েছেন। সাধারণ বাসিন্দারা, তাঁর সঙ্গে কথা বলার কোনও সুযোগই পাননি।
'দিদির দূত' কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবিবার মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে যান বিধায়ক মোশারফ হোসেন। তিনি দেখা করেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আসিফ আহমেদের সঙ্গে। এরপর হাসপাতালের সমস্যা দেখাতে গিয়ে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় স্বাস্থ্য আধিকারিককে। রবিবারই মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামে যান বিধায়ক মোশারফ হোসেন। কালো গাড়িতে চড়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলে যান বিধায়ক। হাতের কাছে বিধায়ককে পেয়ে অনেকেই সমস্যার কথা বলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিধায়কের গাড়ি না-থামায় তাঁরা সেই সুযোগ পাননি।
গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মুর্শেদা বেগম বলেন, 'বিধায়ক আসছে শুনে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। গ্রামের রাস্তার সমস্যার কথা বলতাম। কিন্তু বিধায়কের গাড়ি দাঁড়াল না। ফলে কিছু বলা হল না।' আনারুল শেখ বলেন, 'গ্রামের রাস্তা বেহাল। ভোটের আগে রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। এবার ঠিক করেছিলাম বলব। কিন্তু, বিধায়কের গাড়িই তো থামল না।'
স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল কোনাই বলেন, 'বিধায়ক আসার খবর পেয়ে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু বিধায়ক গাড়ি থেকেই নামলেন না। অনেক কথা বলার ছিল। কিন্তু, কিছুই বলা হল না।' গ্রামবাসীদের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, 'আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম। ব্লক সভাপতি বললেন, কারও কিছু বলার নেই। তাই চলে এসেছি।'
আরও পড়ুন- মিড ডে মিলের চালে মরা টিকটিকি-ইঁদুর, কড়া পদক্ষেপ স্কুলশিক্ষা দফতরের
মুরারই গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ শুনতে হল বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। তাঁর কাছে হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাবের কথা তুলে ধরেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য আধিকারিক আসিফ আহমেদ বলেন, 'আমি পরিকাঠামো অভাবের কথা বলতে ওঁনার সঙ্গে ছিলাম। হাসপাতাল চত্বর ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। কোন রাজনৈতিক দলের মিছিলে হাঁটিনি।'
মোশারফ হোসেন বলেন, 'বিডিও এলাকায় আরও শৌচাগার নির্মাণের অনুরোধ করেছেন। হাসপাতালে তিনজন গাইনোকোলজিস্ট থাকলেও পরিকাঠামোগত কারণে সিজার করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিএমওএইচ জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি ব্লক সভাপতিকে দেখার জন্য বলেছি। তবে, বিএমওএইচ আমাদের মিছিলে হাঁটেননি। উনি আমাদের পরিকাঠামো ঘুরিয়ে দেখান।'