মালদহের মহানন্দা নদীতে বাইচ প্রতিযোগিতার আসরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিখোঁজ হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সূত্রের খবর, নৌকাডুবির জেরে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচোলের জগন্নাথপুরে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত নৌকার ১০ যাত্রীকে উদ্ধার সম্ভব হলেও বাকিরা নিখোঁজ। তাদের সন্ধানের কাজ চলছে।
মহানন্দা নদীর ওপারে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার মুকুন্দপুর গ্রাম। মুকুন্দপুরের মহানন্দা নদীর ঘাটে চাঁচোলের জগন্নাথপুর গ্রামের প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে নৌকা করে এপার থেকে ওপারে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ভরা মহানন্দা নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনাটি ঘটে। নৌকাডুবির পর চাঁচোলের জগন্নাথপুর এলাকার মহানন্দা নদীর ঘাটে পৌঁছায় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। পাশাপাশি, এলাকায় মোতায়েন রয়েছে চাঁচোল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে রাজীব কুমার, দেখে চেনাই দুষ্কর
মালদার জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, 'ইতিমধ্যে নৌকাডুবিতে দুইজন মারা গিয়েছেন। দশজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। চার থেকে পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের খোঁজে দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের ডুবুরি নামানো হয়েছে মহানন্দা নদীতে। নিখোঁজদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।'
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে , বৃহস্পতিবার রাত সাতটা নাগাদ চাঁচোল থানার মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর ঘাটের অপরপ্রান্তে ইটাহার থানার মুকুন্দপুর ঘাট। ওই এলাকায় একটি বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই বাইচ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর, মল্লিকপাড়া সহ তিন থেকে চারটি গ্রামের প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা জগন্নাথপুর ঘাট থেকে একটি নৌকো করে মুকুন্দপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ওই সময় মহানন্দায় হঠাৎই নৌকা উল্টে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী থাকার ফলে নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: এনআরসি নিয়ে সমস্যা নেই হাসিনার
উত্তরবঙ্গ ভারী বৃষ্টির ফলে মহানন্দা নদীতে এখন জল বেশি রয়েছে। ফলে প্রবল স্রোতে উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে। ওই নৌকার বেশ কয়েকজন যাত্রী শুধু সাঁতরে প্রাণে বেঁচেছেন। বাকি যাত্রীরা এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
জগন্নাথপুর এলাকার নৌকা ডুবির হাত থেকে উদ্ধার হওয়া এক যাত্রী গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, 'যন্ত্রচালিত নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তুলেছিলেন মাঝি। অনেক নিষেধ সত্ত্বেও তিনি কথা শোনেননি। বর্ষার মরশুমে মহানন্দা নদী অনেকটাই বিস্তীর্ণ রয়েছে। এই অবস্থায় মাঝ নদীতে গিয়ে ওই নৌকাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় । কয়েকজন শিশু মহিলারা ওই নৌকায় ছিল। প্রত্যেকেই গ্রাম থেকে বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে যাচ্ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে সব ওলটপালট হয়ে গেল। কোনরকমে সাঁতরে জগন্নাথপুর ঘাটে উঠেছি। বুঝে উঠতে পারছিনা এখন কি হবে।'
আরও পড়ুন: পুজোয় ১৫০টা শাড়ি পেয়েছি, শোভনদা একটা দিয়েছে: বৈশাখী
চাঁচোলের বিধায়ক আসিফ মেহেবুব জানিয়েছেন, 'নৌকাডুবি ঘটনাটি শুনেছি। আমি ওই এলাকায় যাচ্ছি। পাঁচ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর শুনতে পেয়েছি। নিখোঁজ বহু। এখনও নির্দিষ্টভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। গ্রামবাসীরা একেক জন একেক রকম কথা বলছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।'
চাঁচোলের এসডিপিও সজল কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন , 'পুরো বিষয়টির ওপর নজর রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর অধিনস্ত ডুবুরিদের মহানন্দা নদীতে নামানো হয়েছে। তড়িঘড়ি এলাকায় সার্চলাইট বসিয়ে বিশেষ বাহিনীর সহযোগিতা নিয়েই যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে।' নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।