New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/11/bardhaman_jawan1.jpg)
সসন্মানে শেষযাত্রা। ছবি: জয়প্রকাশ দাস
ছত্তীসগড়ে আগামী ১২ ও ২০ নভেম্বর বিধানসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা ডিউটি করতে ১০ অক্টোবর সেরাজ্যে গিয়েছিলেন দিনাঙ্কর। গতকাল, ৮ নভেম্বর, দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের পুঁতে রাখা ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
সসন্মানে শেষযাত্রা। ছবি: জয়প্রকাশ দাস
সকাল থেকেই বর্ধমানের ইছলাবাদের ঘোষপাড়ায় মুখোপাধ্য়ায় বাড়িতে মানুষের থিকথিকে ভিড়। দুপুর গড়াতেই যেন গোটা ইছলাবাদ এলাকায় মানুষের ঢল নেমে আসে। একবার সবাই শেষ দেখা দেখতে চান মাওবাদীদের হাতে নিহত জওয়ানকে। দুপুর দুটো নাগাদ দিনাঙ্কর মুখোপাধ্য়ায়ের কফিনবন্দি দেহ বাড়িতে ঢুকতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন স্ত্রী মিতা মুখোপাধ্য়ায়। সতেরো বছরের ছেলে তখন বাকরুদ্ধ। আশপাশের মানুষের মুখেও কোনও শব্দ নেই। তারপর জেলা পুলিশের রাইফেল গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার দেন সিআইএসএফের জওয়ানরা। মাঠে তখন তিল ধারনের জায়গা নেই। নির্মল ঝিল মহাশ্মশানে গান স্যালুটের মাধ্য়মে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হলো মাওবাদীদের হাতে নিহত সিআইএসএফ-এর এই হেড কনস্টেবলকে।
ছত্তীসগড়ে আগামী ১২ ও ২০ নভেম্বর বিধানসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা ডিউটি করতে ১০ অক্টোবর সেরাজ্যে গিয়েছিলেন দিনাঙ্কর। গতকাল, ৮ নভেম্বর, দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের পুঁতে রাখা ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ব বর্ধমানের বিধানপল্লী ঘোষপাড়ার বাসিন্দা দিনাঙ্কর এর আগে বায়ু সেনায় কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ঘোষপাড়ার মুখোপাধ্যায় বাড়িতে এসে পৌঁছতে শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা পরিবার। পাথর হয়ে যান মৃত জওয়ানের স্ত্রী মিতা এবং একমাত্র ছেলে, একাদশ শ্রেণীর ছাত্র দেবজিত। মুহুর্তে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোক নেমে আসে গোটা এলাকায়।
কলকাতার গার্ডেন রিচে সিআইএসএফের হেড কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্বভার নিয়েছিলেন দিনাঙ্কর। গতকাল সকালে তিনি দান্তেওয়াড়ায় মেসের বাজার করে ফেরার পথে ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। এই ঘটনায় একই সঙ্গে আরও চারজন সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী জানান, ভারতীয় বায়ু সেনা থেকে ২০১১ সালে অবসর নেন দিনাঙ্কর। তারপর তিনি যোগ দেন ফারাক্কার সিআইএসএফ ব্যাটেলিয়ানে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল আন্দামানে। তিন বছর ছিলেন সেখানে। তারপর গার্ডেন রিচে হেড কনস্টেবল হিসেবে কাজে যোগ দেন। দান্তেওয়াড়ায় তাঁর দায়িত্ব ছিল জওয়ানদের একটি মেসের দেখাশোনার।
বায়ু সেনার পর আর কোনও নিরাপত্তা বাহিনীতে স্বামী কাজ করুন, তা চাননি মিতা। এমনকী তাঁদের ছেলেকেও কোনও বাহিনীতে চাকরি করতে দিতে চান না তিনি। দিনাঙ্করের পরিবারের বক্তব্য, অনেক জায়গায় মাওবাদী উৎখাত হয়েছে, এবার ছত্তিশগড়ের দিকে সরকারের আরও নজর দেওয়া উচিত ছিল। বাহিনীও বাড়ানো দরকার ছিল।
এদিকে শুক্রবার বর্ধমানের মানুষ চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন সিআইএসএফের এই শহীদকে। বর্ধমান জেলা পুলিশের রাইফেল গ্রাউন্ডে উপচে পড়া ভিড় জমালেন অগুন্তি সাধারণ মানুষ। সেখানে স্বামীর মৃতদেহ আগলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিতা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করেছিলেন দিনাঙ্কর। তাঁর সঙ্গে তখনই শেষবারের মতো কথা হয়েছে পরিবারের। মহালয়ার সময় তিনদিনের ছুটিতে তিনি বাড়িতেও এসেছিলেন। মুখোপাধ্যায়দের যৌথ পরিবারের বড় ছেলে দিনাঙ্কর।