দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর লালন শেখের দেহ নিল তাঁর পরিবার। বগটুই গণহত্যা কাণ্ডে মূল অভিযুক্তের সিবিআই হেফাজতে রহস্যমৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে লালনের পরিবার। তিন সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও দায়ের করেছেন স্ত্রী রেশমা বিবি। লালনের দেহ নিতে অস্বীকার করেন তাঁরা।
তবে বরফ গলেছে বুধবার। এদিন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের পর লালনের দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। এদিনই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় লালনের দেহ। সেখানে গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে গোটা বিষয়টি সম্পন্ন হবে। উপস্থিত থাকবেন রামপুরহাটের এসডিপিও।
প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের দাবি, গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন লালন। কিন্তু পরিবারের দাবি, খুন করা হয়েছে লালনকে। সোমবার বিকেলে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পের শৌচাগারে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় লালনের দেহ। যা নিয়ে সিবিআইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সময় একজন মাত্র কেন্দ্রীয় জওয়ান মোতায়েন ছিলেন লালনের জন্য। নিরাপত্তায় এতবড় ফাঁক কী ভাবে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ রাতে ভাদু শেখ খুন হন। তার পর ওইদিন রাতেই তাণ্ডব চলে বগটুই গ্রামে। বাড়িতেই জ্যান্ত পুড়িয়ে নৃশংস হত্যা করা হয় ১০ জনকে। তার মধ্যে শিশুও ছিল। এই ঘটনার বীভৎসতায় গোটা বাংলা কেঁপে উঠেছিল। তার পর ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনার ৯ মাস পর মূল অভিযুক্ত লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
৬ দিনের হেফাজতে পাওয়ার পর তাঁকে অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে আসেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। কিন্তু তিন দিনেরর মাথায় আচমকা মৃত্যু হল লালনের। যা নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বড় সড় প্রশ্ন উঠে গেল। যে কি না ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু, এবার তাঁর মৃত্যুর পর তদন্তের মোড় ঘুরে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন লালনকে ‘খুন’ করেছে সিবিআই! তিন আধিকারিকের বিরুদ্ধে FIR স্ত্রী রেশমা বিবির
সোমবার রাতে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন লালনের পরিজনরা। লালনের দিদি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওঁকে সিবিআই এত মেরেছিল য়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। ওঁকে জল পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। আমরা সিবিআইয়ের শাস্তি চাই।” লালনের স্ত্রীর অভিযোগ, “আমার বাড়ি শেষ করে দিয়েছে সিবিআই। ভাদুর ভাইরা আমাদের ফাঁসিয়েছে। আমার স্বামীকে মেরে দিয়েছে সিবিআই। আমার সামনে আজকে মারল। আমাকেও মেরেছে সিবিআই।”
প্রথমে লালনের দেহ নিতে রাজি হয়নি তাঁর পরিবার। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই পড়ে থাকে দেহ। তবে পুলিশি আশ্বাসে বুধবার দেহ নেয় পরিবার। লালনের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। অন্যদিকে, সিবিআই এই ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর।