২০০২ সালে শেষবার বিশ্বকাপ জয়। তার পর কেটে গিয়েছে ২০ বছর। ব্রাজিলের কাপ জয়ের স্বপ্ন বারে বারেই অধরা থেকে গিয়েছে। ২০১৪ এ জার্মানি’র কাছে বিশ্রী হারের পর ২০১৮ তেও খালি হাতে ঘরে ফেরা। এবার অন্তত কাতারে বিশ্বকাপ ঘরে আনুক দল চাইছেন শ্রীরামপুরের কেট। কেটের মতে, ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই ব্রাজিল। ব্রাজিল কাপ জেতার জন্য খেলবে। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। সমর্থকদের প্রত্যাশা তো থাকবেই। একের পর এক বিশ্বমানের ফুটবলার দলে। সেই ব্রাজিল এবার কাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর। নেইমারই এবারের কাপ জিতুক মনেপ্রাণে চাইছেন কেট।
সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে ২০১৬ সালে প্রেম শ্রীরামপুরের চন্দন ডোডো রায়ের সঙ্গে। ব্রাজিল থেকে প্রেমের টানে শ্রীরামপুরে। বিয়ে সারেন ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে। শ্রীরামপুরের গোস্বামীপাড়াই এখন কেটের পাকাপাকি ঠিকানা। চার বছর পর দেশের কাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর কেট! ফুটবলের উন্মাদনা ভাগ করে নিয়েছেন পাড়ার সকলের সঙ্গে। ব্রাজিল কন্যার মনের আশা পূরণ হবে কিনা তার উত্তর দেবে সময়ই। তবে আপাতত প্রতিটি ম্যাচ দারুণ ভাবে উপভোগ করছেন কেট। গলা ফাটাচ্ছেন দেশের হয়ে।
পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে বাংলাটা খানিক রপ্ত করেছেন কেট। আধো বাংলায় ব্রাজিলকে সমর্থন করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপ শুরু হতেই দেশের জার্সিটা গায়ে চড়িয়েছেন কেট-চন্দন। ঘরের কাজ সেরে চটজলদি টেলিভিশন খুলে খেলার উত্তেজনা উপভোগ করেন। ব্রাজিলের কোন খেলায় মিস করতে চান না তিনি। এদিকে বাঙালীবাবু চন্দন বলেন, ‘ব্রাজিলের মেয়েকে বিয়ে করেছি বলে যে দলটা সমর্থন করি তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। আমি বিয়ের আগে থেকেই ব্রাজিলের ফ্যান। আর এখন যেখানে ঘরের বউ’ই ব্রাজিলের সেখানে খেলা দেখার আগ্রহ উৎসাহ আগের থেকে অনেক-গুণে বেড়ে গিয়েছে। কেট মনেপ্রাণে চান এবারের বিশ্বকাপটা ঘরে আনুক নেইমার’।
আরও পড়ুন : < টাইগার রিসার্ভে সীমানা লঙ্ঘন! রবিনার দিকে আঙুল নেটজনতার, অভিনেত্রী বললেন… >
পাড়ায় আশেপাশে ব্রাজিলের সমর্থকের অভাব নেই। মোড়ে মোড়ে উড়ছে ব্রাজিলের পতাকা। দেশের পতাকা দেখেই চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে কেটের। চন্দন বেশ কয়েকবার ব্রাজিলে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল মানেই ফুটবল। সেখানে ৬ থেকে ৬৬ সবাই মজে থাকেন ফুটবল প্রেমে’।
বিশ্বকাপের সময় নিজের দেশকে প্রচণ্ডভাবেই মিস করেন কেট। তবে পড়শিদের সঙ্গে সেই খেদ খানিক হলেও মিটিয়ে নিয়েছেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী ছিলেন কেট। নিজের দেশের কথা মনে করে খানিক মন খারাপের সুরে কেট বলেন, “ব্রাজিল যেন ফুটবলেই মিলেমিশে একাকার। ফুটবল মানেই সকলের কাছে একটা আবেগ। ব্রাজিলের খেলা থাকলে রাস্তা ঘাট সব ফাঁকা হয়ে যায়। নেইমারই প্রিয় তারকা”।
২০১৪, ২০১৮ এর পর এবার কাপ উঠবে নেইমারের হাতে আশা কেটের। কেটের বাবা ৬৬ বছর বয়সেও স্থানীর ক্লাবে ফুটবলের সঙ্গে এখনও যুক্ত। বেশ কয়েক বার দেশে গিয়ে ফুটবল খেলায় সামিলও হয়েছেন চন্দন। ফ্রান্সের পর চলতি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দল হিসাবে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গিয়েছে ব্রাজিল।
সুইজারল্যান্ডকে শেষ মুহূর্তের গোলে হারিয়ে পরবর্তী পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল সেলেকাওরা। ২০১৮-য় শেষবারের সাক্ষাতে দুই দল ড্র করেছিল। সোমবারেও ম্যাচ কার্যত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল। তবে ক্যাসেমিরোর গোল ব্রাজিলের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেয়। জোড়া জয়ে ব্রাজিল আপাতত ছয় পয়েন্ট নিয়ে নক আউট নিশ্চিত করে ফেলল। আর তাতেই বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস কেটের। করজোড়ে সকলের কাছে একটাই প্রার্থনা “দেশকে এভাবে ভালবাসা, সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ”।