Advertisment

বিয়ের আসরেই তুমুল স্লোগান 'বঞ্চিত' চাকরি প্রার্থী কনের! 'নয়া ধর্ণামঞ্চে' হুলস্থূলকাণ্ড

অল্প সময়ের জন্য হলেও অভয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়ি কার্যত যেন হয়ে ওঠে টেট উত্তির্ণ চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের এক ঠিকানা।

author-image
Rajit Das
New Update
bride raised slogans at her wedding ceremony for demanding appointment as a teacher at bhatar burdwan , বিয়ের আসরেই তুমুল স্লোগান 'বঞ্চিত' চাকরি প্রার্থী কনের! যেন 'নয়া ধর্ণামঞ্চে' হুলস্থূলকাণ্ড

স্লোগানরত অবস্থায় কনে অভয়া রায়।

ধর্মতলার ধর্নাস্থল ছাপিয়ে এবার বিয়ে বাড়িতেও পৌছাল টেট উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থিদের নিয়োগ আন্দোলনের ঢেউ। নিজের বিয়ের আসরেই সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নিয়োগের দাবিতে সরব হলেন টেট উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থী কনে অভয়া রায়। শুধু সরব হওয়াই নয়, বিয়ের সাজে সজ্জিত থাকা অভয়া নিয়োগের দাবিতে রীতিমতো স্লোগানও দিলেন। আর কনেকে হঠাৎকরে শ্লোগান দিয়ে উঠতে দেখে হতবাক হয়ে যান নিমন্ত্রিতরা। পরে অবশ্য সব জেনে তারাও অভয়ার সঙ্গেই গলা মেলালেন। অল্প সময়ের জন্য হলেও অভয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়ি কার্যত যেন হয়ে ওঠে টেট উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের এক ঠিকানা। বিয়ে বাড়িতে হওয়া এমন কর্মকাণ্ডের ভিডিও অভয়ার বন্ধু রাজু বণিক সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই তা ঝড়ের গতীতে ভাইরাল হয়।

Advertisment

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গিয়েছে যে, অভয়া কলকাতা বা তার আশপাশের কোন শহর কিংবা মফস্বল এলাকার বাসিন্দা নয়। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার খেড়ুর গ্রামে। অভয়ার বাবা বনমালি রায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। মা আল্পনাদেবী সাধারণ গৃহবধূ। দাদা লক্ষিকান্ত ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন। অভাবের সংসারের বড় হয়ে ওঠা মেয়ে অভয়া ছোট বয়স থেকেই লেখাপড়া শিখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্নপূরণের জন্য তিনি সমস্ত কষ্টকে উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যান।স্না তক হবার পর অভয়া ডিএলএড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টরি এডুকেশন) কোর্সও সম্পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রাথমিকে নিয়োগের টেট পরীক্ষাতে উত্তির্ণ হন। তার পর থেকে নয়নয় করে নয় বছর পেয়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনেকের মতই অভয়াও নিয়োগপত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন- মমতার রেসিপিতেই বাজিমাত, মিষ্টিতেই এবার রসালো আমের ভরপুর স্বাদ

শিক্ষিকায় চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ বুকে নিয়েই ৬ মে বিয়ের পিড়িতে বসেন অভয়া। ভাতারের ছাতনী গ্রামের যুবক রিন্টু দে-র সঙ্গে অভয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৮ মে সম্পন্ন হয় তাঁদের বৌভাতের অনুষ্ঠান। সংসার জীবনে পা রাখলেও অভয়া নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন থেকে পিছু হাটতে নারাজ। এই বিষয়ে অভয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে তার স্বামীও। তিনি জানিয়েছেন, স্ত্রী যে দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সেটা ন্যায্য। যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে অভয়া নিয়োগের দাবি করছেন। এতে অন্যয়ের কিছু নেই।তা ই অভয়ার পাশেই থাকবেন।

আর বিয়ের আসরে নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দেওয়ার প্রসঙ্গে অভয়া রায় বুধবার বলেন, '২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় উত্তির্ণ হই। তার পর থেকে নয় বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ পত্র হাতে পাইনি। শুধু পেয়েছি প্রতিশ্রুতি। ধর্মতলার ধর্ণামঞ্চ থেকে নিয়োগ চাই, নিয়োগ চাই বলতে বলতে আমার মত সকল বঞ্চিতদের গলা ফেটে গিয়েছে। তবুও নিয়োগ মেলার সৌভাগ্য আজও হয়নি। চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ তাই বিয়ের শুভ দিনেও ভুলে থাকতে পারিনি। জীবনের এত বড় দিনেও হাসতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই আমার বিয়েতে নিমন্ত্রিত সহযোদ্ধারা ৬ মে আমার বাড়িতে এসে পৌছালে ঠিক করে ফেলি বিয়ের আসরেও নিয়োগ চাই ছাড়া অন্য কোনও আলোচনা হবে না। তাই আমি আমার বিয়ের দিনে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সকল নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনেই নিযোগ চাই বলে স্লোগান তুলেছি।' অভয়ার আরও দাবি, 'আমাদের সঙ্গে হওয়া বঞ্চনার কথা সবাইকে জানাতেই এই পথই বেছে নিতে হয়েছে।'

এদিকে নিয়োগের দাবিতে টেট উত্তীর্ণদের বিয়ে বাড়িতে সরব হওয়ার বিষয়টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের নজর এড়ায়নি। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এমন আন্দোলন সত্যিই নজিরবিহীন। এর পরেও যদি সরকারের হুঁশ না ফেরে তাহলে ধরে নিতে হবে এই রাজ্যের সরকার দু’কান কাটা।' বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন বলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শাসক দল তৃণণূল নেতৃত্ব।

East Burdwan Primary TET burdwan
Advertisment