Arnab Dam-PHD: ইতিহাস নিয়ে PHD-র ইন্টারভিউয়ে তাকলাগানো রেজাল্ট করেছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একদা মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বাকিদের পিছনে ফেলে অর্ণব প্রথম স্থান অধিকার করেন। ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্যে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের PHD কোর্সে ভর্তি আপাতত বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। থমকে গিয়েছে ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য অর্ণবের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অনেকেই হতবাক। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, অর্ণবের ভর্তি আটকাতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র এবিষয়ে বলেন, “জেল-সুপারের আবেদনের ভিত্তিতে অর্ণবকে ইন্টারভিউয়ে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্ণব মাওবাদী কি না তা আমাদের জানা নেই। সেটা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। অর্ণবের PHD করার অনুমোদন রাজ্য সরকার দিয়েছে কিনা, কিংবা ৬ মাসের ‘কোর্স ওয়ার্ক’ কীভাবে করবে, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। কারণ এক্ষেত্রে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে।”
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর ওই চিঠির উত্তর আসার পর জানা যাবে অর্ণবকে ইতিহাসে গবেষণা করার সুযোগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় দেবে কি না! অন্যদিকে হুগলি জেল সূত্রের দাবি, PHD-তে ভর্তি স্থগিত জানিয়ে সোমবারই জেল সুপারকে ইমেল পাঠিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ভর্তি কেন স্থগিত, শুধুমাত্র অর্ণবের জন্যই স্থগিত কি না, তা ওই চিঠিতে কিছু উল্লেখ নেই। অর্ণবের পরীক্ষা বা পড়াশোনা সংক্রান্ত কোনও বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হলে জেল কর্তৃপক্ষ সেই মতো সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন- Attack in School: স্কুলে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর, মহিলাদেরও মারধরের অভিযোগ, অভিযুক্ত তৃণমূলের উপপ্রধান
পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল, পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলির চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা চালান। অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। গত ২৬ জুন ইতিহাস নিয়ে PHD-র জন্য ইন্টারভিউ দেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর ইন্টারভিউ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দিকপাল অধ্যাপকরা। ৫ জুন সেই ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট প্রকাশিত হলে দেখা যায় অর্ণব দাম প্রথম স্থান লাভ করেছেন। এমন রেজাল্ট প্রকাশ্যে আসতেই স্পষ্ট হয়ে যায় ইতিহাস বিষয়ে PHD করার ইন্টারভিউয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জেলবন্দি প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম।
মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। অনেক মাওবাদী নেতা রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণ করেছেন। অর্ণব ওরফে বিক্রম অবশ্য জেলবন্দি থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবুও সেই প্রচেষ্টায় বারে বারে তাঁকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে এপিডিআরের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, “রাষ্ট্র মাওবাদীদের বলছে মূল ধারায় ফিরে এসো। জেলের বিধি বলছে, কারুর শিক্ষা লাভের পথ আটকানো যাবে না। অথচ একজন মাওবাদী মূল ধারায় ফিরে আসার জন্য লেখাপড়া করতে চাইছে, PHD-র ইন্টারভিউয়ে প্রথম হয়েছেন, তবুও নানা অজুহাত দেখিয়ে অর্ণবের ভর্তি আটকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর থেকে বড় অন্যায় আর কী হতে পারে!"
আরও পড়ুন- বাংলার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রায় ১০০% পড়ুয়াই ডাহা ফেল! মাথায় বাজ পড়ার জোগাড়
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী সংগঠনের নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেল বন্দি থেকেও কেউ যদি ভোটে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে অন্য কোনও বন্দি পড়াশোনা পারবে না কেন? এটা হতে পারে না।"