রাজ্যপালকে সরাসরি পক্ষপাতদুষ্ট বলেননি বিরোধী দলনেতা। কিন্তু, ইঙ্গিতে সি ভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু আধিকারী। কড়া সুরে বলেছেন, 'তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণের অনেকটাই এড়িয়ে গিয়েছিলেন। আনন্দ বোসজি সেই পথে না হেঁটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই হাঁটলেন। বিগত দিনে মেরুদণ্ড সোজা রাখা রাজ্যপালদের মতো আচরণ বর্তমান রাজ্যপাল করবেন বলে আশা করব।'
শুভেন্দু অধিকারীর 'মেরুদণ্ড সোজা' রাজ্যপাল মন্তব্যে শোরগোল পড়েছে। বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের পর বিরোধী দলনেতা কাদের 'মেরুদণ্ড সোজা' রাজ্যপাল বলতে চেয়েছে? মন্তব্যের মাধ্যমে কী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন?
বিজেপি বিধায়কদের মতোই বিরোধী দলনেতার মুখেও এদিন প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কথা শোনা গিয়েছে। গেরুয়া দলের সঙ্গে সি ভি আনন্দ বোসের পূর্বসূরীর সম্পর্কের রসায়ণ সর্বজনবিধিত। রাজভবন-নবান্ন সংঘাত গত কয়েক বছরে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন তৎকালীন রাজ্যপাল ধনকড়। তাঁকে 'বিজেপির মুখপাত্র' বলে সমালোচনা করত তৃণমূল। পাল্টা যা 'রাজধর্ম' বলে দাবি করতেন বিজেপি নেতৃত্ব। মনে করা হচ্ছে, বর্তমান রাজ্যপালকে বার্তা দিতে 'মেরুদণ্ড সোজা' ধনকড়ের কথাই তুলে ধরতে চেয়েছেন শুভেন্দু আধিকারী।
আরও পড়ুন- উত্তাল বিধানসভা, ফুঁসছেন বিজেপি বিধায়করা, রাজ্যপালকেই বললেন ‘গো ব্যাক’
শুরু থেকেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক ভালো। যা নিয়ে অস্বস্তি কম নেই বিজেপির। সেই কথা পদ্ম নেতৃত্বের কথাতেও বারে বারে ধরা পড়েছে। ২০২২ সালে বিধানসভায়
বাজেট অধিবেশন থেকে এবারের ছবি সম্পূর্ণ আলাদা। সেবার তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ভাষণ সরসারি টিভিতে সম্প্রচারিত হয়নি। এবার কিন্তু সেই সম্প্রচার হয়েছে। যা রাজভবন-নবান্ন সুসম্পর্কের সমীকরণেই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা যায়।
কিন্তু ২০২২ সালে রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতার সময় কী হয়েছিল? তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকা কিরকম ছিল?
গতবার রাজ্য বাজেট অধিবেশনে তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ভাষণ না পাঠ করেই বিধানসভার কক্ষ ত্যাগ করছিলেন। দেখা গিয়েছিল, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, শিউলি সাহারা কার্যত ঘেরাও করে ফেলেছিলেন ধনকড়কে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্নের লিখে দেওয়া ভাষণ উত্থাপন করেই নিজের কাজ শেষ করেছিলেন রাজ্যপাল ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রীর চোখের ইশারায় তৃণমূলের মহিলা বিধায়করা রাজ্যপালকে শারীরিক নির্যাতন করেছিল বলে সোচ্চার হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। যদিও ওইসবের জন্য সেদিন বিজেপি হেসেছিল।
এক বছরে আমূল বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। জগদীপ ধনকড় রাজ্যপালের পদ ছেড়ে বর্তমানে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি। বাংলার সাংবিধানিক প্রধান হয়েছেন অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত আমলা সি ভি আনন্দ বোস। যিনি ধনকড় নন বলে ইতিমধ্যেই হতাশা প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতারা। এদিনও যার ব্যতিক্রম হল না।
এদিন ঠিক অভিযোগ শুভেন্দুর?
বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের বক্তব্যের শুরু থেকেই হট্টগোল শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। ভাষণের প্রতিলিপি ছিঁড়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। 'চোর ধরো, জেল ভরো' স্লোগান ওঠে। তার মধ্যেও ভাষণ থামাননি আনন্দ বোস। ওয়াকআউট করেন পদ্ম বিধায়করা। শেষে যখন রাজ্যপাল বিধানসভা ছাড়ছেন তখন তাঁকে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেন বিজেপি বিধায়করা। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যের প্রকৃত অবস্থার কথা প্রতিফলত হয়নি। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, আবাস যোজনা নিয়ে তাঁর বক্তব্যে আমরা হতাশ। বর্তমান রাজ্যপালপক্ষপাতদুষ্ট বলছি না। তবে উনি বোধহয় মমতা ব্যানার্জীর ফাঁপরে পড়ে গিয়েছেন। ঠিক-ভুল বুঝতে পারছেন না। বিভ্রান্ত হচ্ছেন।'