রুশ হামলার শিকার ইউক্রেন। একের পর এক বোমা বর্ষণে লন্ডভন্ড সেদেশের একের পর এক শহর। গোলাপ আওয়াজ শুনেই থরহরিকম্প অবস্থা। চরম আতঙ্কে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়ারা। হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে হস্টেল থেকে বেরিয়ে কোনওমতে আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছে পড়ুয়ার দল। খাওয়া-দাওয়া অনিয়মিত, এভাবে চললে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হয়তো খাদ্য সঙ্কটের কবলে পড়তে হবে। জানা নেই, ভূগর্ভের আশ্রয় থেকে উঠে হস্টেলটিকেও আর আক্ষত দেখা যাবে কিনা। বিপর্যয়ের কবলে পড়া এইরকমই এক ছাত্র পূর্ব-বর্ধমানের পূর্বস্থলীর চুপি কালীতলার শেখ আকিব মেহম্মদ।
অন্য মহাদেশে পড়তে গিয়ে বাড়ির ছেলে চরম সঙ্কটে। আর এদেশে বসে উৎকণ্ঠায় দিনযাপন করছেন আকিবের পরিবারের সদস্যরা। ছেলের দুঃশ্চিন্তায় হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড় এই ডাক্তারি পড়ুয়ার মায়ের।
২০১৮ সালে পূর্বস্থলীর চুপি কালীতলার শেখ আকিব মহম্মদ ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পড়তে ভর্তি হয়। বাবা শেখ আমজাদ পুলিশে কর্মরত। গত চার বছর সব ঠিকাঠাকই ছিল। চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগে। যখন রাশিয়ার তরফে ইউক্রেন দখলের তোড়জোড় শুরু হয়। সেই সময় বাড়তি গ্যাটের কড়ি গুনে অনেক ভারতীয় পড়ুয়াই ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরেছিল। কিন্তু, এ দেশে ফেরার আয়োজন করতে করতেই ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে মস্কো। ফলে এখন চাইলেও দেশে ফিরতে অপারগ আকিব মহম্মদরা। বাড়িতে সেকথাই বার বার বলছেন ডাক্তারি পড়ুয়াটি।
বুধবার থেকেই যুদ্ধের দামামা বেঁধেছিল।আর বৃহস্পতিবার ইউক্রেন দখলে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। আপাতত আন্ডারগ্রাউন্ডে আকিব সহ প্রায় পাঁচশোজন ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রী। উপরে গোলা বারুদের বর্ষণ, আর নীচে অক্সিজেনের অভাব, অনিয়মিত খাবার খেয়েই কাটছে এইসব পড়ুয়াদের। ভয়াবহ আতঙ্ক। আকিবের চেহারা হেলদি হওয়ার কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে শ্বাসকষ্টের মধ্যে রয়েছে সে। জানালেন পড়ুয়ার মা সুলতানা বেগম। তিনি বলছিলেন যে, 'ইউনির্ভাসিটিতে অফলাইনে ক্লাস চলছিল, ফলে ছেলে আসতে পারেনি। ওর চেহারা হেলদি, তাই আন্ডারগ্রাউন্ডে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ড্রাউ ফ্রুটস খেয়ে থাকতে হচ্ছে ওদের। আপাতত আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। খুব চিন্তায় রয়েছি।'
আকিবের মামা সাবাবুদীদীনের কথায়, 'ফিরতে চাইলেও উপায় নেই। ভারত সরকার যদি কোনও উপায় বার করেন তাহলে সুবিধা হয়।' আপাতত ফোনে ছেলের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে। তাও যে আর কতদিন সম্ভব, কেউ জানে না। তখন কীভাবে খবর পাওয়া যাবে?গভীর উদ্বেগে আকিব ও তাঁর মতো আরও অনেক ভারতীয় পরিবার।