scorecardresearch

দামোদরের মাটি ‘লুঠ’ করছেন পঞ্চায়েত উপপ্রধান! প্রশাসনকে অভিযোগ জানালেন তৃণমূল কর্মীরাই

মুখে কুলুপ তৃণমূল বিধায়কের, অভিযোগ অস্বীকার পঞ্চায়েত উপপ্রধানের।

শাসন ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অভিযোগকারী ওই তৃণমূল কর্মীরা। ছবি-প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
শাসন ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অভিযোগকারী ওই তৃণমূল কর্মীরা। ছবি-প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

অবৈধ খাদান খুলে দামোদর নদ থেকে বালি লুঠের অভিযোগ হামেশাই উঠে থাকে। এবার উঠল দামোদর নদের মানার কাছ থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ। আর সেই অভিযোগে নাম জড়িয়েছে খোদ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও জেলাপরিষদ সদস্যের স্বামীর বিরুদ্ধে। তাতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েত এলাকায় রাজনৈতিক মহলে। মাটি বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা আবার তাঁদের গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ও মহকুমা শাসকের (বর্ধমান দক্ষিণ) দফতরে জমা দিয়েছেন।এমনকি প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অভিযোগকারী ওই তৃণমূল কর্মীরা।

প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে তৃণমূলের কর্মীরা অভিযোগে জানিয়েছেন,দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গৌতম রায় তার ৮ নম্বর বালি খাদান থেকে বালির পরিবর্তে নদের মানার কাছ থেকে মাটি কাটাচ্ছে। প্রতিদিন ৬০-৭০টি ট্র্যাক্টরের ট্রলিতে সেই মাটি লোড করে তিনি বিক্রি করে দিচ্ছেন। অবৈজ্ঞানিক ভাবে মাটি কাটার জন্য নদের মানা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ষায় ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে ওই তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে পথে নেমে আন্দোলনও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা।

দলুইবাজার ২ অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী পিন্টু মল্লিক ও চন্দ্রশেখর গিরি জানিয়েছেন, উপপ্রধান গৌতম রায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রির কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। গত একমাস হল তিনি একেবারে নদের মানার কাছ থেকে মাটি কাটিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এর ফলে নদের মানা যেমন ভেঙে যাচ্ছে তেমনই এলাকায় জল সংকটের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। পিন্টু মল্লিক এও বলেন,’নদি থেকে মাটি কেটে বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন পূর্বে প্রতিবাদ করেছিল। যাঁরা প্রতিবাদ করেছিল তাদের নানা ভাবে হেনস্তা করেছিলেন উপপ্রধান গৌতম রায়। সেই ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষজন উপ-প্রধানের এই অন্যায় কাজ নিয়ে এখন আর প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। তবে এই ঘটনা নিয়ে এলাকার চাষি ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁষছেন’।

অপর তৃণমূল কর্মী দেবাশিস বনিক জানান ,“উপপ্রধানের পাশাপাশি এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সীমা হালদারের স্বামী বাবুলাল হালদারও এখন তাঁর বালির খাদান থেকে মাটি কেটে দেদার বিক্রি করছেন “। দেবাশিসবাবু এও বলেন, “প্রশাসনের আধিকারিকরা মাঝে মধ্যে দু’ একটি মাটির গাড়ি ধরেই দায় সারেন। তাই তাঁরা-সহ এলাকার সকল বাসিন্দারা চাইছেন, নদের মানার কাছ থেকে মাটি কেটে বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিক। প্রয়োজনে ওইসব খাদানের লাইসেন্স বাতিল করে দিক প্রশাসন“।

যদিও এইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌতম রায়। তিনি বলেন,’বৈধ ভাবে বালি খাদানের লিজ নিয়ে আমি খাদান চালাচ্ছি। তাই আমার খাদান থেকে গাড়িতে বালি-ই লোড হয়। নদের মানার কাছ থেকে মাটি কেটে ট্র্যাক্টরে লোড করে আমি বিক্রি করছি বলে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে। আসলে ওটা ধাস বালি। তার সঙ্গে কিছু মাটির ঢেলা হয়তো রয়ে থাকতে পারে। ওই ধাস বালি যখন ট্র্যাক্টরে লোড হয়ে যাচ্ছে তখন বলা হচ্ছে ওটা নাকি নদের মানার কাছ থেকে কেটে নেওয়া মাটি বোঝাই ট্র্যাক্টর’।

এমনটা করার কারণ প্রসঙ্গে গৌতম বাবু জানান, তাঁর সঙ্গে মেমারি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যের বনিবনা হচ্ছে না। তাই বিধায়কের ইশারাতেই তাঁর অনুগামীরা তাঁকে সামাজিক ভাবে অপদস্ত করার এই খেলায় নেমেছে। একই রকম মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর খুড়তুতো বোন তথা জেলাপরিষদ সদস্য সীমা হালদার ও তার স্বামী বাবুলাল হালদারকেও অপদস্ত করা হচ্ছে’। একইসঙ্গে গৌতম রায় জানিয়েদেন, তিনি দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েতকে ’করে খাওয়ার জায়গা’ হতে দেননি বলেই স্বার্থান্বেষীরা এইসব মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর বদনাম করতে চাইছে। বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য যদিও উপপ্রধানকে কাঠগড়ায় তুলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন,’প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। প্রশাসনের তদন্তেই আসল সত্য সমনে আসবে’।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Burdwan damodar river erosion soil theft tmc