উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। নাবালিকর মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের মধ্যে সংঘাতও চরমে। এই অবস্থার মধ্যেই এবার এক বিধবাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠলো পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। রাতে বাড়িতে চড়াও হয়ে বিধবাকে গণধর্ষণের অভিযোগে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জামালপুরের বাহাদুরপুর গ্রামে। তবে এইক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ পাওযার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। ফলে জামালপুরে কালিয়াগঞ্জের মত কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়ায়নি। যদিও বিধবাকে গণধর্ষনের ঘটনায় বিরোধী শিবির যে আন্দোলনে নামতে চলেছে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
পুলিশ জানিয়েছে, বিধবাকে গণধর্ষনের ঘটনায় ধৃতরা হল মহম্মদ সুরজ ওরফে রাজা ও রাজু ক্ষেত্রপাল। দু’জনেরই বাড়ি বাহাদুরপুর গ্রামে। নির্যতিতা একই গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ গণধর্ষণের ধারায় মামলা রুজু করে দুই ধৃতকে সোমবার বর্ধমান আদালতে পেশকরে। গোপন জবানবন্দি পেশের জন্য নির্যাতিতাকে বর্ধমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করানো হয়েছিল। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতদের ৩ দিন পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা মহিলা জামালপুরের বাহাদুরপুরের বাসিন্দা। অল্প বয়সেই তিনি বিধবা হয়েছেন। লিখিত অভিযোগে নির্জাতিতা পুলিশকে জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে তাঁর দুই ছেলে বাইরে থাকে। সেই কারণে বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। সেই সুযোগ নিয়েছে গ্রামের দুই যুবক মহম্মদ সুরজ ও রাজু ক্ষেত্রপাল। মহিলার অভিযোগ, গত শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তিনি যখন ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন সেই সময়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় সুরজ ও রাজু । তারপর ওই দুই যুবক মিলে তাঁকে ধর্ষণ করে। কোনওরকমে যুবকদের কবল থেকে মুক্ত হয়েই মহিলা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। তখনই দুই যুবক পালিয়ে যায়। পরদিন ঘটনা সবিস্তার উল্লেখ করে মহিলা অভিযুক্ত দুই যুবকের বিরুদ্ধে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
কালিয়াগঞ্জ কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় চলার মাঝেই এমন অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে জামালপুর থানার পুলি। গণধর্ষনের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ দুই অভিযুক্তের খোঁজে নেমে পড়ে। খোঁজ খবর নিয়ে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত দুই যুবক এলাকা ছেড়ে হুগলীর জেলার খানাকুলে গা ঢাকা দিয়েছে। যুবকরা যে দক্ষিণ ভারতে পালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেই খবরও পুলিশের কাছে পৌছায়। এর পর রবিবার রাতে জামালপুর থানার পুলিশের একটি দল খানাকুলে পৌছে অভিযান চালিয়ে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি ,বিধবাকে গণধর্ষণে জড়িত থাকার কথা ধৃত দুই যুবক স্বীকার করেছে। হেফাজতে নেওয়া দুই যুবকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনঃনির্মাণ করা হবে বলে জামালপুর থানার পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। সিপিআইএম জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, 'তৃণমূল সরকারের রাজত্বে গণধর্ষণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কামদুনি,ও পার্কস্ট্রিট গণধর্ষন কাণ্ড দিয়ে শুরু। এখনও এই রাজ্যের কোথাও না কোথাও গণধর্ষনের ঘটনার ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে তা আরও মর্মান্তিক ।' আর সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল বলেন, 'বামফ্রন্টের রাজত্বে মহিলাদের নিরাপত্তা ছিল। মহিলারা আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতে পারতেন। মেয়েরা স্বাধীন ভাবে ঘোরা ফেরা ও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারত। আর এখন মহিলাদের নিরাপত্তা শিকেয় উঠেছে।' ভারতী ঘোষাল জানিয়েদেন,মঙ্গলবার বাহাদুরপুর গ্রামে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে তাঁরা দেখা করে ঘটনা বৃত্তান্ত জানবেন। মহিলার সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলবেন। ডেপুটেশনও দেবেন। ২৭ এপ্রিল গণতান্ত্রিক মহিলার সমিতির সদস্যরা বহাদুরপুরের ঘটনা নিয়ে পথে নেমে প্রতিবাদ জানাবেন।
বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সভাপতি পিন্টু সাম বাহাদুরপুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, 'মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই রাজ্যের সরকার, পুলিশ ও প্রশাসন। তাই এখন পশ্চিমবাংলায় নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। মঙ্গলবার রজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জামালপুরের সভায় যোগ দিয়ে বাহদুরপুরের গণধর্ষনের ঘটনা নিয়ে প্রশাসনকে যা জানানোর জানিয়ে দেবেন।'