Burdwan Maharaja BJP Loksabha candidate Dilip Ghosh: বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েই বর্ধমানের রাজাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠলেন দিলীপ ঘোষ। রবিবার, বর্ধমানের প্রয়াত মহারাজা উদয়চাঁদ মাহতাবের মূর্তিতে তাঁর মাল্যদানের কথা ছিল। যথারীতি লোকজন নিয়ে সেখানে পৌঁছেও যান বিজেপি প্রার্থী। এরপরই তৈরি করেন বিড়ম্বনা। রাজা ভেবে রাজপরিবারের অন্য সদস্যের গলায় মাল্যদান করে বসেন। সঙ্গে তারস্বরে দিয়ে ওঠেন স্লোগান, 'উদয়চাঁদ অমর রহে'।
অবশ্য এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। বর্ধমান রাজপরিবারের অতীতের সঙ্গে পঞ্জাবের নাম জড়িয়ে আছে। কিন্তু, সেটা বিজেপি প্রার্থীর জানা ছিল না। সেসব কাহিনি সামান্য শুনেই তিনি প্রশ্ন জুড়ে দেন, এখানে আবার 'কাপুর' এল কোথা থেকে? রাজকাহিনি নিয়ে প্রার্থীর এইসব প্রশ্নে রীতিমতো অস্থির হয়ে পড়েন উপস্থিত বিজেপি কর্মীরা।
বর্ধমান সোনাপট্টি এলাকায় রয়েছে বর্ধমানে এককালের রাজাদের রাজবাড়ি। তার সামনেই রয়েছে রাজপরিবারের ঘনিষ্ট বনবিহারী কাপুরের মূর্তি! রবিবাসরীয় সকালে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে দিলীপ ঘোষ সেখানে পৌঁছে যান। ওই মূর্তিটিই বর্ধমান মহারাজা উদয়চাঁদের মূর্তি ভেবে তাতে তিনি মালা পরিয়ে দেন। এমনকী তিনি, 'মহরাজ উদয়চাঁদ অমর রহে' বলে স্লোগানও দিয়ে বসেন। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দিলীপ ঘোষ ভুল করছেন বুঝে, দলের কয়েকজন তাঁকে সঠিকটা জানানোর চেষ্টা করেন। তখনই দিলীপ ঘোষ বলে বসেন, 'এখানে আবার কাপুর এল কোথা থেকে?'
তার উত্তরটা আমাদের জানিয়েছেন ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশ। তিনি বলেছেন, বনবিহারী কাপুর ছিলেন জ্যোতিষী। তাঁর বাড়ি ছিল পূর্ব বর্ধমানের গলসির কাছে। তাঁর পুত্র বিজয়চাঁদকে দেখে রাজা আফতাবচাঁদের মহিষীর দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে জাগে। বিনিময়ে রাজ এস্টেট দেখাশুনার দায়িত্ব পান বনবিহারী। বিজয়চাঁদের জন্ম ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে। রক্তের সম্পর্কে বনবিহারী কাপুর তাঁর দাদু।
আফতাবচাঁদ মারা গেলে বিজয়চাঁদকে ১৮৮৭ সালে রাজার আসনে বসানো হয়। তখন অবশ্য তিনি নাবালক। ওইসময় রাজবাড়ির এস্টেট দেখাশুনা করতেন বনবিহারী। তিনি সম্মানের সঙ্গে কাজ করে মারা গেলে রাজবাড়ি চত্বরে তাঁর একটি মূর্তি বসানো হয়। ১৯৪৩ সালে রাজা হিসেবে অভিষেক হয় বিজয়চাঁদের পুত্র উদয়চাঁদের। বর্ধমানবাসীর মতে, এই ইতিহাস না জানার ফলেই দিলীপ ঘোষ রবিবার রাজ পরিবারের আত্মীয়কে রাজা ভেবে বসেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এনিয়ে দিলীপ ঘোষকে একহাত নিয়েছেন রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি বলেন, 'উনি বর্ধমানের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যিনি গরুর দুধে সোনা খুঁজে পান, তাঁর কাছে এটাই স্বাভাবিক। ওরা বাংলার মণীষীদের চেনে না। এইসব ভুল বর্ধমানের মানুষকে আরও সহ্য করতে হবে।'
আরও পড়ুন- শতাব্দীকে পেয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন গ্রামবাসীরা! নিজস্ব কৌশলে শান্ত করলেন তৃণমূল প্রার্থী
শুধু বর্ধমানই নয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এরাজ্যে কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারেরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছে বিজেপি। রাজপরিবারের কর্ত্রী অমৃতা রায়কে এবারের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসন থেকে গেরুয়া শিবির প্রার্থী করেছে। তাঁর বিপক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে লড়ছেন মহুয়া মৈত্র। বিজেপি অমৃতা রায়কে কৃষ্ণনগরের 'রাজমাতা' বলে প্রচার চালাচ্ছে। রবিবার কৃষ্ণনগরের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির 'রাজমাতা' প্রার্থীকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, 'যিনি বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু ওরা (বিজেপি) বিপদে পড়বে। কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার পলাশির যুদ্ধে সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।' কৃষ্ণনগরের প্রার্থীকে নিয়ে এমন রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই বর্ধমানে দিলীপ ঘোষের ভুল মূর্তিতে মাল্যদান এবং প্রশ্নবাণ সামনে আসে।