Advertisment

বিরল রোগে আক্রান্ত প্রসূতি জন্ম দিলেন কন্যার, অসাধ্যসাধন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের, জানলে গর্বিত হবেন

বিরল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে এই অসাধ্যসাধন করেছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এমন ঘটনা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
7 people died in a road accident in Gurap Hooghly

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

বয়স ২১ বছর হলেও উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট। তার উপর আবার কোমরের নিচের অংশ অকেজো। তাই হাঁটতে পারেন না। এহেন ’ডোয়ার ফ্রিজম হুইলচেয়ার সিনড্রোমে’ আক্রান্ত প্রসূতি জন্ম দিলেন কন্যাসন্তানের। মা ও শিশু কন্যা দু’জনেই রয়েছেন সুস্থ। বিরল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে এই অসাধ্যসাধন করেছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এমন ঘটনা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

Advertisment

প্রসূতির নাম শিখা মাঝি। বছর তিনেক আগে শিখা মাঝিকে বিয়ে করেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর যুবক শক্তি মাঝি। এরপর গত বছর তিনি সন্তানসম্ভবা হন। স্বামী ও পরিবারের লোকজন শিখাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক কে পি দাসকে দেখান। প্রসূতির শারীরিক সব প্রতিকুলতা খতিয়ে দেখে চিকিৎসক তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। এরপর থেকে বেশ কয়েক মাস ধরে একপ্রকার কোলে করেই স্ত্রী শিখা মাঝিকে চিকিৎসা করানোর জন্যে বর্ধমান হাসপাতালে আনতেন স্বামী শক্তি মাঝি।

অবশেষে গত মঙ্গলবার প্রসব যন্ত্রণা উঠলে প্রসূতী শিখা মাঝিকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই ৬ সদস্যের ডাক্তারি টিম গঠন করে প্রসূতির সিজারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু যেহেতু শিখা মাঝির উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট এবং তাঁর নিম্নাংশ যেহেতু কাজ করে না, তাই তাঁর সন্তান প্রসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল চিকিৎসকদের কাছে। কার্ডিয়াক পালমোনারি অ্যারেস্টের ঝুঁকিও ছিল। তবে দমে যাননি চিকিৎসকরা। সমস্ত ঝুঁকি নিজেদের কাঁধে নিয়েই বিরল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে অসাধ্যসাধন করেন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক মলয় সরকার, কে পি দাস, এস পি দাস,সুমন্ত ঘোষ মৌলিকদের নিয়ে গঠিত ৬ সদস্যের মেডিক্যাল টিম। বিকল্প অ্যানাস্থেসিয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে তাঁরা প্রসূতির সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। সফল ভাবে সিজার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে চিকিৎসকরা জন্ম দেন শিখা মাঝির গর্ভে থাকা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের ।

সন্তানের বাবা হয়ে যারপরনাই খুশি শক্তি মাঝি

বুধবার তিনি বলেন,শিখাকে বিয়ে করাটা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জেরই ছিল। শিখাকে বিয়ে করার জন্য তাঁকে নিজের বাড়িও ছাড়তে হয়েছে। তবুও স্ত্রী শিখাকে তিনি কোনওদিনও বোঝা ভাবেননি। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে কোলে করে নিয়েই তিনি বর্ধমানে হাসপাতালে আসতেন চিকিৎসা করাতে। আজ তিনি সন্তানের বাবা হলেন। শিখা মা হলেন। বর্ধমান হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের জন্যেই সন্তান লাভ সম্ভব হয়েছে বলে শক্তি মাঝি জানিয়েছেন।

চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী ’ডুয়ারফিসম হুইল চেয়ার সিনড্রোমে’ যাঁদের রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করা সাধারণ ঘটনা নয়। এরপরেও ওই মহিলা স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভধারণ করেছিলেন। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মহিলা গত মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। যেহেতু, এই ধরনের রোগীর অস্ত্রোপচার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য বর্ধমান হাসপাতালের ৬ জন চিকিৎসকের একটি টিম গঠন করা হয়। সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় এক্ষেত্রে তার বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন Independence Day Special: জন্ম ভিটেতেই ব্রাত্য আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, গর্জে উঠল গোটা বাংলা

চিকিৎসকদের মতে এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা খুবই জটিল বিষয়। অন্যান্য রোগীর মতো স্বাভাবিকভাবে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। কারণ, এই ধরনের রোগীর হার্ট, ফুসফুস ও ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। হাসপতালের চিকিৎসকরা বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর মা ও সদ্যোজাত শিশুকন্যা এখন দু'জনেই সুস্থ আছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

government of west bengal West Bengal burdwan
Advertisment