'এখানে টাকা ছাড়া কাজ হয় না, টাকা দিতেই হবে।' এইকথা জানিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের ছেলের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠলো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের ডোমেদের বিরুদ্ধে। ঘটনার বিহিত চেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতের ছেলে মৃণালকান্তি কোলে। অভিযোগ পেয়েই তদন্তকে ঢাল করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
সদ্য পিতৃহারা মৃণালকান্তি কোলের বাড়ি জেলার মেমারি থানার পাল্লারোডের কাঁটাটিকর গ্রামে। তিনি পেশায় ডেকরেটর ব্যবসায়ী। লিখিত অভিযোগে প্রশাসনকে তিনি জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর পথ দুর্ঘটনায় তাঁর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র কোলে মারা যান। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরদিন অর্থাৎ, ২ নভেম্বর সেখানে কৃষ্ণচন্দ্র বাবুর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
মৃণালকান্তি বাবুর অভিযোগ, ওইদিন বিকালে তাঁর বাবার মৃতদেহ তাঁদের হাতে হস্তান্তরের সময়ে মর্গের ডোমেরা পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা দিতে তিনি রাজি হননি। উল্টে প্রতিবাদ করেন। তখনই টাকা না দিলে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে না বলে মর্গের ডোমেরা তাঁকে হুমকি দেয়। তা নিয়ে বাকবিতন্ডা চলার সময়ে ডোমেরা তাঁকে সাফ জানিয়েছিল, দাবি না মিটলে তাঁরা ময়নাতদন্ত হওয়া মৃতদেহ যথাযথ ভাবে সেলাই না করে, পলিথিন ও কাপড় না মুড়িয়েই মৃতদেহ হস্তান্তর করবে। তবে এ জন্যও দুই হাজার টাকার লাগবে।
মৃণালকান্তি বাবু জানান, ডোমেদের এই দাবিও তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন মানতে রাজি হননি। তাই বাকবিতন্ডা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকে। সরকারি মর্গের ডোমেদের এমন হুঁশিয়রি ও দুর্ব্যবহারে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। শেষে সাড়ে তিনি হাজার টাকায় রফা হয়। সেই টাকা টাকা নিয়ে ময়নাতদন্ত হওয়া বাবার মৃতদেহ ডোমেদের থেকে পান মৃণালকান্তি কোলে। মৃণালকান্তির দাবি, মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় ডোমেরা ধমকের সুরে তাঁকে বলেছিল, 'এখানে (মর্গে) টাকা ছাড়া কাজ হয় না, টাকা দিতেই হবে, শুধু শুধু দেরি করলেন।'
এরপর বিহিত চেয়ে মৃণালকান্তি কোলে, গোটা ঘটনার কথা রাজের মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন , 'এই বিষয়ে আমি কিছু বলবো না, যা বলার হাসপাতাল সুপার বলবেন।' বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষকে ফোন করা হলে তিনিও কোন মন্তব্য না করে বিষয়টি নিয়ে একই ভাবে এড়িয়ে যান। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা বলেন, 'অভিযোগ পত্র এখনও হতে পাইনি। এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে তার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' জেলা পুলিশ সুপার কমনাশিষ সেন জানিয়েছেন, 'অভিযোগর বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে।'