Advertisment

বর্ধমান স্টেশন দুর্ঘটনা: মা বাড়ি ফেরাল ছেলেকে, নিথর দেহ সাদা কাপড় মোড়া অবস্থায়

মায়ের বুকফাটা কান্নায় সকলের চোখে জল।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
kranti bahadur

মৃত ক্রান্তি বাহাদুর (ডান দিকে) ও তাঁর মা রীণা দেবী (বাঁদিকে)।

ছেলেকে নানির বাড়ি পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন মা রীণা দেবী। কথা ছিল বুধবার রাতের মধ্যে ছেলে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু তা আর হল না। উল্টে ছেলে ক্রান্তি বাহাদুরের (১৪) নিথর দেহ বাড়িতে বৃহস্পতিবার মা রীণা দেবীকেই আসতে হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছেলেকে দেখেই তাঁর দেহ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। তখন সন্তান হারানো এক মায়ের বুকফাটা কান্না দেখে হাসপাতালের কর্মী থেকে রোগী পরিজনদের অনেকেরই চোখের জল বাধ মানেনি।

Advertisment

সন্তান শোকে ভারাক্রান্ত রীণাদেবী। হাসপাতালে দাঁড়িয়েই অনর্গল বলছিলেন আক্ষেপের কথা। বলেন, 'ছেলে ক্রান্তি বিকেল বাড়ি ফিরবে বলে অপেক্ষা করছিলাম। সে হুগলীর পাণ্ডুয়ায় গিয়েছিল। রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন না পাওয়ায় বুধবার বেলায় জয়নগর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার জন্যে বর্ধমান স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। সঙ্গে ছিল এক আত্মীয়। ওই সময়ে আচমকাই বর্ধমান স্টেশনে থাকা শতাব্দী প্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক ছেলের মাথায় ভেঙে পড়ে। তাতে ক্রান্তি মারাত্মক জখম হয়। ট্যাঙ্কের জলে ছেলের মোবাইল ফোনটাও নষ্ট হয়ে যায়। দুর্ঘটনারর পর পুলিশ বর্ধমান স্টেশন থেকে ক্রান্তিকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।' মায়ের কথায়,'এসব আমি কিছুই জানতাম না। বর্ধমান হাসপাতাল থেকে পুলিশ মারফত রাতে খবর যায় সাহেবগঞ্জে। সেখানকার রেল পুলিশ আমাদের বাড়িতে দুঃসংবাদ পৌঁছে দেয়।'

আরও পড়ুন- বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনা: রেলের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ, ছেড়ে কথা নয়! কী করলেন মৃতার স্বামী?

রীণা দেবীর আক্ষেপ, 'আমার স্বামী নেই। ছেলে ক্রান্তি বাহাদুর-ই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। আমার চোদ্দ বছর বয়সী ছেলে স্কুলে পড়তো। সেই ছেলেকে হারিয়ে এখন আমি সর্বস্বান্ত।' মৃত ক্রান্তির মাসি চম্পা দেবী বলেন, 'বুধবার ১টায় ট্রেন আসার কথা ছিল। তার আগেই চরম সর্বনাশেয় ঘটনা ঘটে যায়। ক্রান্তির মৃত্যুর জন্য রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ কোন মাকে তাঁর সন্তান হারানোর বেদনা ঘুচিয়ে দিতে পারে? আমরা চাই যাত্রী সুরক্ষায় সচেতন হোক রেল।'

আরও পড়ুন- নবান্নে নিজের দফতরে ঢুকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার চক্ষু চড়ক গাছ! কী এমন হল?

ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ অর্থ এখনও বর্ধমান স্টেশন দুর্ঘটনায় মৃতদের কোনও পরিবারই পায়নি। যা নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার প্রতিবাদে রেলের বিরুদ্ধে বর্ধমান জিআরপি-তে এফআইআর দায়ের করেছেন স্টেশ দুর্ঘটনায় আরেক মৃত মাফুজা খাতুনের স্বামী আব্দুল মফিজ শেখ। তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, এখন কিছুটা দেওয়া হয়েছে, প্রতিশ্রুতি মতই মৃতদের পরিবার ৫ লাখের বাকিটাও পেয়ে যাবেন।

Death accident Mother-Child
Advertisment