Saayoni Ghosh comment on Curzon Gate: বর্ধমান শহরের ঐতিহ্যবাহী কার্জন গেট (Curzon Gate) নাকি তৈরি হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে! যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষের (Saayoni Ghosh) এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়েছে। হাসি, ঠাট্টার সঙ্গে চলছে ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপও। সায়নী ঘোষের ইতিহাস জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
কী বলেছেন সায়নী?
বুধবার বর্ধমানের কার্জনগেট চত্বরে দলের এক প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিলেন সায়নী ঘোষ। সেখানেই তিনি বলেন, '১২ বছর আগে কী ছিল, এখন কী হয়েছে?' শতাব্দী প্রাচীন কার্জনগেটে দেখিয়ে যুব তৃণমূলের সভানেত্রী বলেন, 'ছিল এই গেট? এই ঝাঁ চকচকে রাস্তা-আলো-হাসপাতাল? সবই তৈরি হয়েছে মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ১২ বছরে।'
বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলনের সূত্রে কার্জনের নাম তো প্রায় সকলেই জানা। ১৯০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও বড়লাট মার্কুইস জর্জ ন্যাথানিয়ল কার্জন এই গেট উদ্বোধন করেন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী,বিজয় চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে,তদানিন্তন বর্ধমানের মহারাজা ১৯০৩ সালে জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে এই বিশাল তোরণটি তৈরি করেছিলেন। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটি হয় বলে তার কার্জন গেট নামকরণ হয়।
বিরোধীদের নিন্দা
বর্ধমানের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কার্জনগেট। যার ইতিহাস সায়নী বদলে দিলেন রাতারাতি! সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। কংগ্রেস নেতা গৌরব সম্মাদার বলেন, 'তৃণমূলের নেতা নেত্রীরা তৃণমূল সুপ্রিমোর চাটুকারিতার শেষ পর্যায় চলে গিয়েছেন বলেই ঐতিহাসিক তোরণ নিয়ে এমন উদ্ভট মন্তব্য শোনা যাচ্ছে।' বিজেপি নেতা পুষ্পজিৎ সাঁইয়ের কথায়, 'যাঁর রাজনৈতিক শিক্ষা কম,তিনি তো এরকমই মন্তব্য করবেনই। তাছাড়া কার্জন গেট নিয়ে যিনি ভুলভাল ইতিহাস শোনাচ্ছেন, তিনি তো শিব ঠাকুর নিয়ে কু'কথা বলেছেন। সুতরাং এমন নেত্রী কার্জন গেটের ভুল ইতিহাস বলবেন এটাই স্বাভাবিক।'
তৃণমূলের দাবি
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যে মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'বিরোধীদের সব ব্যাপারে সমালোচনা করা কাজ, সেটাই তারা করছে। সায়নী ঘোষ শিক্ষিত মানুষ, উনি কার্জন গেটের ইতিহাস জানেন। সায়নী তৃণমূল সরকারের শাসনকালে বিশ্ব বাংলা লোগো লাগানো যে সব গেট হয়েছে, তারই কথা বলেছেন।'
কার্জন গেটের ইতিহাস
১৯০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও বড়লাট মার্কুইস জর্জ ন্যাথানিয়ল কার্জনের হাতে এই গেটের উদ্বোধন হয়েছিল। বানানোর পরে, এই তোরণের নাম দেওয়া হয়েছিল 'স্টার গেট অফ ইণ্ডিয়া'। নির্মাণ কাজ চলেছিল প্রায় এক বছর ধরে। পুরোটাই, বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবের উদ্যোগে। ১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই তোরণের নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং পুরো কাজ শেষ হয় ১৯০৪ সালের মার্চ মাসে।
এই তোরণ বানানোর দায়িত্বে ছিল ম্যাকিনটশ বার্ন কোম্পানির উপরে। বার্ন কোম্পানিতে সেই সময় বহু বিদেশি স্থপতি, প্রযুক্তিবিদ যুক্ত ছিলেন, যারা সম্পূর্ণ নকশা ও পরিকল্পনা করেন। একশ ফুট বাই একশ ফুট ব্যাসের প্রায় ৩০ ফুট গভীর খাদের মাটি খোঁড়ার পর মাটির ভিতর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়। ভিতের নীচে বালি, পাথর দিয়ে শক্ত গাঁথুনি গাঁথা হয়। সেই গাঁথুনি ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয় মাটির ভিতর। প্ল্যাটফর্মের মত ধাপে ধাপে ওঠে তোরণ।
বিজয় চাঁদের রাজ্যাভিষেক ঘটে ১৯০৩ সালে ছোটলাট লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার বোর্ডিলিয়ন সাহেবের উপস্থিতিতে। সেই বছরেই তোরণের পরিকল্পনা এবং কাজ শুরু হয়। পরের বছর ১৯০৪-এ বর্ধমান পরিদর্শনে আসেন লর্ড কার্জন। স্টার গেট অফ ইণ্ডিয়ার দ্বারোদঘাটন করে, সেই পথ দিয়েই তাঁর শহরে প্রবেশ। পরবর্তী সময়ে ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য বিজয়চাঁদ গেটের নাম বদলে কার্জন গেট রাখেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, পুরো পরিকল্পনার পিছনেই স্যার বোর্ডিলিয়ন এবং লর্ড কার্জনের প্রচ্ছন্ন সম্মতি ছিল।
কার্জন গেট বর্তমানে 'বিজয় তোরণ'
যদিও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর পালটে দেওয়া হয় কার্জন গেটের নাম। বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদের নামে তোরণের নাম রাখা হয় বিজয় তোরণ।একই সাথে শহর বর্ধমানের প্রধান রাস্তার নাম হয় বিজয় চাঁদ রোড। ১৯৭৪ সাল থেকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনসম্পদ বিভাগ দ্বারা তোরণটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে এত কিছুর পরেও তোরণটির কার্জন গেট নামেই আজও বিশেষ জনপ্রিয়।