হুগলির হরিপালের আবু বক্কর, পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ব্যবসার প্রয়োজনে এখন বক্কর থাকেন গুজরাটের আমেদাবাদে। দিন পনেরো আগেই বাড়ি ফিরেছেন। মূলত ব্যবসার কারিগর বাংলা থেকে গুজরাটে নিয়েই যেতেই ব্যবসায়ীর বাড়ি ফেরা। যা করতে গিয়েই ভয়ঙ্কয় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল আবু বক্কর ও তাঁর পরিবারকে। রহস্যভেদ হতেই প্রকাশ্যে এলো আসল তথ্য। হতবার মধ্যবয়সী ব্যবসায়ী।
জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ কারিগর ঠিক করার জন্য ব্যবসায়ী আবু বক্কর একটি ওয়াগনার গাড়ি ভাড়া করে হরিপাল থেকে বর্ধমান যাচ্ছিলেন। সে কথা জানতে পেরে মাঝপথে গুরাপের কাছে তাঁর ভাগ্নী জামাই জসিমউদ্দিন মামা-শ্বশুরকে নাস্তা করার আহ্বান জানান। খোলামনেই জসিমউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে গুরাপের হাজীগড়ের কাছে একটি দোতলা বাড়িতে যান বক্কর। একদূর সব ঠিকই ছিল।
তারপরই ঘটল আসল ঘটনা। জানা যায়, দোতলা বাড়িতে শ্বশুর জামাইয়ের সাক্ষাৎপর্ব কিছুটা এগোতেই জসিমউদ্দিন তাঁর আসল মূর্তি ধরে। ভয় দেখিয়ে ওয়াগানার গাড়ি সহ ড্রাইভার কে তাড়িয়ে দেয় সে। এরপর সঙ্গীসাথী নিয়ে মামা শ্বশুরের ওপর চড়াও হয়। মারধর করে তাকে একটি ঘরে তালাবন্ধ করা হয় আবু বক্করকে।
এরপর ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকেই তাঁর স্ত্রীকে (সম্পর্কে যিনি জসিমউদ্দিনের মামি শাশুড়ি) ফোন করে সেই রাতের মধ্যেই ৩৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানযে, টাকা না পেলে আবু বক্করকে মেরে ফেলা হবে। বলা হয় মুক্তিপণের টাকা রাতেই যেখানে বলা হবে সেখানে পৌঁছে দিতে হবে।
ফোন পেয়েই আবু বক্করের স্ত্রী ভয় পেয়ে পরিচিত এক আইনজীবী র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই আইনজীবীর পরামর্শে হরিপাল থানায় রাতেই অভিযোগ করা হয়। এরপর পুলিশ ওই ফোনের টাওয়ার লোকেশন চেক করে এবং ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে অকুস্থল পৌঁছায়, বাড়ি ঘিরে ফেলে। উদ্ধার হয় আবু। ধরা পড়ে যায় তার ভাগ্নি জামাই।
হুগলি গ্রামীনের পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন জানিয়েছেন, গোপন সূত্র ধরে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী থানা গুরাপের একটি জায়গা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি দু'জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক ও করা হয়। পরবর্তী কালে ওই দু'জনকে গ্রেফতার করে এদিন চন্দন নগর আদালতে পেশ করা হয়। ধৃত দের নাম জসিমউদ্দীন মল্লিক ওরফে লাল্টু এবং সাইদুল রহমান। ধৃতদের জেরা করে বাকি দের ধরার চেষ্টা চলছে।
জসিমউদ্দীন কি পেশাদার অপহরণকারী? শুধুই কি টাকার লোভ? নাকি এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে কোনও পারিবারিক বা অন্য কারণ? প্রকৃ রহস্য ভেদে এইসব প্রশ্নই এখন বারে বারে সামনে আসছে।