সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর বিরোধিতায় তোলপাড় রাজ্য। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা আধার, ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছেন। কিন্তু এখনও জমির নথির কাজ সম্পূ্র্ণ হয়নি। কিন্তু এরইমধ্যে ১১৪ বছর আগের জমির দলিল আগলে বসে রয়েছেন বিজেন্দ্রলাল বর্মন। তাঁর কাছে রয়েছে একই জমির চার জমানার নথি। তবে ৬৮ বছরের সাবেক ছিটমহলের এই অধিবাসীর এনআরসি নিয়ে কোনও আতঙ্কই নেই।
সাবেক বাংলাদেশের ছিটমহল ফলনাপুর। ২০১৫-তে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ফলনাপুর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কোচবিহারের মাথাভাঙার এই গ্রামের বাসিন্দা বিজেন্দ্রলাল বর্মন। দীর্ঘ দিন তিনি ভারতভুক্তির আন্দোলন করেছেন। অবশেষে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই ছিটমহল। বিজেন্দ্রলাল বলেন, "আগে একপ্রকার রাষ্ট্রহীন ছিলাম। অনেক আন্দোলনের পর দেশ পেয়েছি। কিন্তু পাঁচবছর কেটে গেলেও জমির জটিলতা এখনও কাটেনি। সবে খসরা খতিয়ান বেরিয়েছে। তবে আমার কাছে চার সরকারের দলিল আছে।"
মাথাভাঙার ফলনাপুরের বিজেন্দ্রলাল বর্মন। ছবি-শশী ঘোষ
সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে প্রচার, পাল্টা প্রচার চলছে। তবে এসব নিয়ে 'উটকো' চিন্তা ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেন্দ্রলালবাবু। তাঁর কথায়, "আমার কাছে কোচবিহারের রাজা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের জমির নথি আছে। এবার ভারত সরকারের জমির নথি হাতে পাব।" সেই আশায় দিন গুনছেন বর্ষীয়ান বিজেন্দ্রলাল। তাঁর পেশা কৃষি কাজ।
বিজেন্দ্রলাল বর্মনের বাড়ি। ছবি- শশী ঘোষ
বিজেন্দ্রবাবুর দাবি, "কোচবিহারের রাজার দলিল রয়েছে ১৯০৪ সালের। তারপর রয়েছে ব্রিটিশ রাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দলিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই এলাকা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৬৬ বঙ্গাব্দের (১৯৫২ সাল) পাকিস্তানের দলিলও রয়েছে সিন্দুকে। সব ক্ষেত্রেই লেখা ছিল পাটগ্রাম, জেলা জলপাইগুড়ি। তারপর ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের দলিল। সেখানে লেখা জেলা লালমনির হাট।" একই জমির এই চারটে দলিল সংরক্ষিত করে রেখেছেন তিনি। তবে এখন প্রয়োজনে ফলনাপুরের বাসিন্দারা জমি কেনা-বেচা করতে পারছেন না। গ্রামবাসীদের দাবি, এখন যা পরিস্থিতি তাতে ৫ লক্ষ অর্থ মূল্যের জমি বিক্রি করলে ১ লক্ষ টাকাও মিলবে না। কবে পুরো নথি মিলবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।