পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি তালিকা নিয়ে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় আজ, ১৭ জুন, অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেসব সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, সেই অন্তর্ভুক্তির উপর আপাতত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, এই অন্তর্ভুক্তিগুলি সংবিধানসম্মত কি না, তা গভীরভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
আদালতের এই আদেশের ফলে, সংশ্লিষ্ট শ্রেণিগুলি বর্তমানে সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা থেকে সাময়িকভাবে বঞ্চিত হবে। তবে যারা ইতিমধ্যেই এই সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই রায় প্রযোজ্য হবে না বলে আদালত স্পষ্ট করেছে।
জনস্বার্থে দায়ের হওয়া মামলাগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওবিসি তালিকাভুক্তি করেছে এবং সংবিধানের ৩৪২এ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘটেছে। এই প্রেক্ষিতে আদালত আজ গুরুত্বপূর্ণ এই অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
বিচারপতি মান্থার এই নির্দেশের ফলে রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শাসক ও বিরোধী শিবির একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য আরও বাড়িয়েছে।
এদিন আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তৈরি নতুন ওবিসি তালিকায় ৭৬টি মুসলিম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তি স্থগিত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য আমি কলকাতার মাননীয় হাইকোর্টের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটি একটি অহংকারী রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের এক বিরাট বিজয়, যারা তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য বারবার সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।"
তিনি আরোও লিখেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিএমসি সরকারের স্পষ্ট তোষণের রাজনীতি, যা প্রায় ৯০% নতুন ওবিসি শ্রেণীর ওবিসি তালিকায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি থেকে স্পষ্ট, সমতা এবং ন্যায্যতার নীতির সরাসরি অবমাননা।২০১০ সালে টিএমসি ক্ষমতায় আসার আগে, ওবিসি শ্রেণীর মাত্র ২০% মুসলিম ছিল। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনামলে, এই সংখ্যা আকাশছোঁয়া হয়ে পড়েছে, যোগ্য হিন্দু এবং অন্যান্য অমুসলিম শ্রেণীকে দূরে সরিয়ে রেখেছে যারা ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে ছিল এবং যাদের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল।"
শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, "আজকের স্থগিতাদেশ একটি শক্তিশালী স্মারক যে আইনের শাসন রাজনৈতিক সুবিধাবাদের উপর প্রাধান্য পায়।ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার এবং ভোটব্যাংকের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে সংরক্ষণের অপব্যবহার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমি বিচার বিভাগকে অভিনন্দন জানাই।"