বাল্যবিবাহ ও শিশু পাচার রোধে এবার পঞ্চায়েত প্রধানকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন, 'এই নির্দেশ ভালোভাবে কার্যকর করতে সব জেলায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে শিশু অধিকার ও বাল্যবিবাহের কুপ্রভাব সমন্ধে অবহিত করতে হবে। পঞ্চায়েতস্তরে এই প্রসঙ্গে জানানো ও তৎপরতার সঙ্গে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করা জেলাশাসকের কর্তব্য।'
হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের কমিশনার সুদেষ্ণা রায়ের দাবি পাচার রোধে রাজ্যের সব পঞ্চায়েত প্রধানদের ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর কথায়, 'আদালতের নির্দেশ খুবই ভালো। পাচার রোধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যেদের যুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ছাড়া এই কাজ সাফল্যের সঙ্গে করা সম্ভব নয়।' এছাড়াও তিনি বলেছেন, 'পাচার রুখতে পুলিশ ও প্রশাসনও সজাগ রয়েছে। লকডাউনের সময় কমিশনের কাছে ২০০টিরও বেশি বাল্যবিবাহের অভিযোগ এসেছে। প্রায় সবকটি অভিযোগেরই সুরাহা হয়েছে। বাল্যবিহ বন্ধ করা গিয়েছে। '
পাশাপাশি, এ রাজ্যে রাজ্যের শিশু সুরক্ষার বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১৬ জুনের মধ্যে প্রতিটি জেলায় পঞ্চায়েত প্রধান, জেলা বিচারক, শ্রম দফতরের সচিব, স্বরাষ্ট্র দফতরকে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানাতে হবে হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে।
আদালতের দুই সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছেন, 'শিশুরা দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং ভবিষ্যতে দেশের অগ্রগতিকে সর্বোত্তম করতে পারে এমন সেরা মানবসম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়। কিশোর বয়স সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবারের অর্থাভাবের কারণে উন্নত ভবিষ্যতের বদলে এরাই সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার হতে পারে। সাধারণ ধারণা হয় যে পরিবারই ছোট বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ। তবে অর্থাভাব ও সামাজিক স্থায়িত্বের অভাবে পরিবারের দ্বারাই শিশুরা বেশি পাচার হয়ে থাকে।'
সম্প্রতি জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল করোনা, লকডাউন ও আমফান পরবর্তী সময়ে এ রাজ্যেপ্রায় ১৩৬ জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও শিশু পাচার, শিশু শ্রম ও নারী নির্যাতনের হার ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এবিষয়ে মামলার গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যকে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হলফনামা দিয়ে জানান, রাজ্যে গত ৮ জুন পর্যন্ত ২৯,৬৫৮ শিশু শ্রমিকের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে ২৪,২৯৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। ৫৩৬০ জনকে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে নারী পাচার ও বাল্য বিবাহের ব্যাপারেও করা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন