প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী চিত্রশিল্পী রবীন মণ্ডল। মঙ্গলবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রয়াণকালে বয়স হয়েছিল ৯০। শিল্পীগোষ্ঠী ‘ক্যালকাটা পেন্টার্স’ তাঁরই হাতে গড়া।
তাঁর প্রয়াণে শিল্পীমহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, যিনি ষাটের দশক থেকেই প্রয়াত শিল্পী এবং তাঁর কাজের সঙ্গে পরিচিত, বলেন, "আমি, রবীনদা, শুভা (শুভাপ্রসন্ন) একসঙ্গে যেতাম দিল্লি-বম্বেতে ছবির এক্সিবিশনে ছবি পাঠানোর আগে কাচের বাক্সে প্যাকিং করাতে। সেই থেকে চিনি। মানুষ হিসেবে যেমন অমায়িক, একেবারে মাটির কাছাকাছি, শিল্পী হিসেবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় শিল্পকলায় তাঁর অবদান, তাঁর নিজস্বতা, অনস্বীকার্য। তাঁর আকায় মানুষের আদিম রূপ, এবং তাঁর সমসাময়িক কলকাতার অস্থিরতা, উঠে এসেছে বারবার।"
১৯২৯ সালে হাওড়ার এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শিল্পী রবীন মণ্ডলের। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী। শিল্পীচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল শৈশবেই। বিদ্যাসাগর আর্ট স্কুল থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। তরুণ শিল্পী মনে সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলেছিল রবি ঠাকুর আর যামিনী রায়ের আঁকা।
আরও পড়ুন: নকশালপন্থী নেতা, সাহিত্যিক সন্তোষ রানা প্রয়াত
১৯৬৪ সালে আট বন্ধু মিলে দিল্লির আইফ্যাক্স গ্যালারিতে ছবির প্রদর্শনী করলেন জানুয়ারি মাসে। প্রদর্শনীর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তৈরি হল ‘ক্যালকাটা পেন্টার্স’। ১৯৬৪-র নভেম্বরে কলকাতার আর্টিস্ট্রি হাউসে প্রথম প্রদর্শনী হল ক্যালকাটা পেন্টার্সের। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ললিত কলা অ্যাকাডেমির সদস্য ছিলেন রবীন মণ্ডল। শিল্প জগতে তাঁর অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ পুরস্কারে।
চড়াই উতরাইয়ে ভরা শিল্পী জীবন। সাফল্যের পথ মসৃণ ছিল না শুরুতে। শারীরিক অসুস্থতা শৈশবেই বাড়িয়ে তুলেছিল প্রতিকূলতা। একাকিত্ব বাসা বাঁধা শিশুমন সঙ্গী খুঁজেছিল ক্যানভাসে। ঘরে বন্দি জীবনে কথা হত তুলি-পেনসিলের সঙ্গেই। তাঁর কথায়, "আমার কাছে শিল্প আসলে অন্তরাত্মার বহিঃপ্রকাশ। ওই একটাই মাধ্যম আমার জানা। তেল-তুলি-পেনসিল-চারকোল দিয়ে আমি আমার আবেগ তুলে ধরি। এ ভাবে অন্য একটা জগতে চলে যাই আমি। আর তখনই কথা বলে ওঠে আমার ক্যানভাস।" সেই ক্যানভাসই থমকে গেল আজ।