মারাত্মক ছোঁয়াচে। অতি দ্রুত বহু লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে ওমিক্রন যে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ওমিক্রন কাঁটা পেরিয়ে মানুষ দ্রুত সুস্থও হয়ে উঠছেন। নিঃসন্দেহে তা ভাল খবর। তবে এর মধ্যে আবার অনেকে বিপদের সিঁদুরে মেঘও দেখছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ওমিক্রন থেকে সেরে ওঠার পর কি ফের কি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? আসুন শুনে নেওয়া যাক, এর উত্তরে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
করোনার বিপদ এড়াতে বহু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। টিকার জোড়া ডোজ সম্পূর্ণ হয়েছিল অনেকের ক্ষেত্রে। কিন্তু ওমিক্রন কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি। যে হারে মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন করোনার এই নয়া স্ট্রেনে, তা ক্রমাগত উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি জেগেছে প্রশ্নও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কি এর পরেও থাকতে পারে? এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ওমিক্রনে কাবু হয়েছেন। তাহলে কি ওমিক্রন পুনরায় কাউকে পেড়ে ফেলতে পারে? অর্থাৎ, সেরা ওঠার পর কি আবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাঘুরি করছে অনেকের মনে। বিশেষজ্ঞরা সে সম্ভাবনা এই মুহূর্তে একেবারে খারিজ করে দিচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডের যে কোনও ভ্যারিয়েন্টেই মানুষ আক্রান্ত হোন না কেন, পুনরায় আক্রমণের সম্ভাবনা বেশ কম। আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির ক্ষেত্রেও সেই প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। শতাংশের বিচারে তা মাত্র ৫ শতাংশ। অর্থাৎ একই ভ্যারিয়েন্টে মানুষ দুবার আক্রান্ত হয়েছেন, এরকম হার খুবই কম। আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়েও থাকেন, তবে তা অন্তত ৬ থেকে ৯ মাস পরে। ততদিন পর্যন্ত শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা যে কোনও ভ্যারিয়েন্টকেই আটকে রাখার চেষ্টা করে। দেখা গিয়েছে, Sars-Cov-1-এ যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই Sars-Cov-2-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছিলেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় শরীরের মধ্যে বেশ কিছু ‘মেমরি সেল’তৈরি হয়। যারা কিনা আগের ভাইরাসের স্মৃতি বা লক্ষ্মণ ধরে রাখে। যখন নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট শরীরে ঢোকার চেষ্টা করে, তখন এই মেমরি সেলগুলো সক্রিয় হয়ে শরীরকে নয়া বিপদ সম্পর্কে জানান দিতে থাকে। আর সেইমতো সেজে ওঠে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে যেহেতু ওমিক্রন একেবারেই নতুন ভাইরাস তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনই বিশদ তথ্য হাতে আসেনি। তার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে। তবে ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছে, সেলেব থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে, টিকা নেওয়ার পরেই কেউ দুবার কেউ কেউ আবার তিনবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন তেমন সম্ভবনা যে একেবারেই নেই তা নয়, তবে তা খুবই কম ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, একবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে, আগামী ছয়মাস ওমিক্রন শরীরে থাবা বসাতে পারবে না। এপ্রসঙ্গে বিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী জানালেন, ওমিক্রন একটি করোনার নয়া প্রজাতি। এর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনায় অনেক বেশি। করোনা ভাইরাসে মানুষ একবার আক্রান্ত হওয়ার পর যেমন দুবার, তিনবারও আক্রান্ত হয়েছেন, ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও সেই সম্ভবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে একবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে পরবর্তী কালে ওমিক্রনে আক্রান্ত হতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। তবে আমাদের সকল কোভিড প্রটোকল মেনে চলতে হবে। এদিকে টিকা নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মন্তব্যের প্রসঙ্গে ডক্টর নন্দী জানিয়েছেন, “ টিকা নেওয়ার পর যেভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তা দেখে টিকার কার্কারিতা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়”। তবে টিকা যে অনেক মৃত্যুকে আটকাতে পেরেছে সেব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে এবিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন"।
অপর দিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুন্যব্রত গুঁই জানাচ্ছেন, “একবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর যে আবার ওমিক্রনে আক্রান্ত হবেন না তেমন কোন তথ্য প্রমাণ সামনে আসেনি, কাজেই একবার আক্রান্ত হওয়ার পর ফের ওমিক্রন থাবা বসাতেই পারে আপনার শরীরে। তবে সে সম্ভবনা খুবই কম। তবে ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠার পরও মেনে চলতে হবে সকল কোভিড বিধি না হলে, আগামী ৬ মাস পর ফের আপনি ওমিক্রনে আক্রান্ত হতেই পারেন”। যে কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় শরীরের মধ্যে বেশ কিছু ‘মেমরি সেল’তৈরি হয়। যারা কিনা আগের ভাইরাসের স্মৃতি বা লক্ষ্মণ ধরে রাখে। যখন নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট শরীরে ঢোকার চেষ্টা করে, তখন এই মেমরি সেলগুলো সক্রিয় হয়ে শরীরকে নয়া বিপদ সম্পর্কে জানান দিতে থাকে। আর সেইমতো সেজে ওঠে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাই পরের বার একই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকলেও একেবারেই নেই তা নয়’।