Advertisment

একতলার অনুমোদনে পাঁচতলা ঝাঁ চকচকে বিল্ডিং, মারাত্মক আশঙ্কায় হাইকোর্টে মামলা

পঞ্চায়েত দিয়েছিল 'একতলা' বাড়ি তৈরির অনুমোদন। কিন্তু তৈরি হয়েছে পাঁচ তলার বিশাল বিল্ডিং।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
case filed in hc against illegal construction of an eye hospital in jamalpur

এই সেই বহুতল। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত দিয়েছিল 'একতলা' বাড়ি তৈরির অনুমোদন। কিন্তু তৈরি হয়েছে পাঁচ তলার বিশাল বিল্ডিং। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের ঘন জনবসতি পূর্ণ এলাকায় তৈরি হওয়া সেই বহুতলেই চোখের হাসপাতাল গড়ে তুলেছে একটি সংগঠন। যেটির মালিকানা ও পরিচালনা, সবই রয়েছে 'লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের' নামে।

Advertisment

নিজস্ব ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ওই চোখের হাসপাতালটি থেকে দুর্গন্ধ-যুক্ত জল বেরোয় বলে অভিযোগ। তাতেই অতিষ্ট হয়ে জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বহুতল নির্মাণের যাবতীয় 'বেনিয়ম'-এর পর্দাফাঁস হয়ে যায়। ওই বহুতলের নির্মাণ অবৈধ বলে দাবি করে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে হলফনামা জমা দিয়েছেন। আর তা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই জোরালো হচ্ছে বহুতল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি।

জামালপুর থানার ঠিক বিপরীতে রয়েছে 'লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ায় ট্রাস্ট'-এর পাঁচতলার বিল্ডিংটি। সেটির একটু পাশেই রয়েছে লায়ন্স ক্লাবের আরও একটি তিন তলা বিল্ডিং। এই দুটি বিল্ডিংয়ের মাঝে রয়েছে থানার কালী মন্দির। লায়ন্স ক্লাবের দুটি বিল্ডিংয়েয় দুই পাশে এবং পিছনে রয়েছে ঘন জনবসতি, দোকান ও বাজার। এমনকী লায়ন্স ক্লাবের দুটি বিল্ডিংয়ের কয়েক হাত দূরেই রয়েছে সেচ দফতরের অফিস, জমি রেজিস্ট্রি (এডিএসআর) অফিস ও পোস্ট অফিস। সেচ দফতরের অফিস, জামালপুর থানা ও লায়ন্স ক্লাবের দুটি বিল্ডিংয়ের মাঝ বরাবর রয়েছে একফালি রাস্তা।

আরও পড়ুন- খাওয়ার থালা থেকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা, গা কাঁপানো পরিণতি নির্দল সমর্থকের!

জামালপুরের রাধাবল্লববাটী মৌজার যে জমির উপর 'লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট' তাদের পাঁচ তলা বিল্ডিংটি তৈরি করেছে সেই জমিটির পরিমাণ ১৭২০ বর্গফুট অর্থাৎ ৪ শতক। আদালতে পেশ হওয়া নথি অনুযায়ী ,ওই জায়গায় 'হাসপাতাল বাড়ি' তৈরির জন্য ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রদীপ রায় ২০১১ সালের ২৩ জুন জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আবেদন করেন। তবে কত তলার বাড়ি তৈরি হবে তার কোনও কিছুই প্রদীপ রায়ের আবেদন পত্রে উল্লেখ ছিল না বলেই দাবি।

নির্দিষ্ট টাকার রসিদ কেটে ২৭ জুন সেই আবেদন মঞ্জুর করেন তদানীন্তন সিপিএম পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রমা বিশ্বাস। অনুমোদন পত্রের দস্তাবেজে উল্লেখ থাকে, “পঞ্চায়েতের বিধি মেনে আবেদন নির্দিষ্ট জায়গায় লায়ন্স ক্লাব অফ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে একতলা বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হল।'

আরও পড়ুন- কড়া অবস্থান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, যোগীর বুলডোজার ভাড়ার পরামর্শ

সেই অনুমতির ভিত্তিতে উক্ত দাগ নম্বরের জমিতে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। তবে একতলা বাড়ি নয়, তৈরি হয় পাঁচ তলার বিশাল বিল্ডিং। অভিযোগ, একতলা বাড়ি তৈরির অনুমতি নিয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পাঁচ তলার বিশাল বিল্ডিং তৈরি হলেও তা নিয়ে তখন রহস্যজনক ভাবেই নীরব পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন। বছরের পর বছর ধরে ওই বহুতলেই রমরমিয়ে চলছে চোখের হাসপাতাল। এই তথ্য সামনে আসতেই নানা ভাবে রমা বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়। তাঁর স্বামীকে ফোন করে তদানীন্তন পঞ্চায়েত প্রধান রমা বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সুযোগ মেলেনি।

এদিকে বহুতল হাসপাতালটি চালুর পর থেকে তার নিজস্ব কোনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সাধারণের ব্যবহৃত ড্রেন ব্যবহার করে হাসপাতালটি।
তা নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ বাড়তে থাকে। দুর্গন্ধ ও দূষণ নিয়ে আশপাশের বাসিন্দারা ব্লক, জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সহ প্রশাসনের নানা মহলে অভিযোগ জানান। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু না হয়নি। শেষমেশ ওই বহুতল হাসপাতালের পাশে থাকা এক বাসিন্দা সমীর সামন্ত ২০২০ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

প্রায় তিন বছর ধরে চলা মামলায় বাদি-বিবাদী দু’পক্ষ ছাড়াও জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান মণিকা মুর্মুকেও আদালতে হাজিরা দিতে হয়। পঞ্চায়েতে থাকা যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হন প্রধান মণিকা মুর্মু। ওই দিনই তিনি 'লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে'র পাঁচতলা বিল্ডিংটির নির্মাণ অবৈধ বলে দাবি করে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে হলফনামা জমা দেন।

আরও পড়ুন- মমতার দফতরেই ভয়ঙ্কর ‘দুর্নীতি’? মারাত্মক দাবিতে শোরগোল ফেললেন শুভেন্দু!

মামলাকারী সমীর সামন্ত বলেন, “বহুতল গড়ে চোখের হাসপাতাল চালু করলেও 'লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট' নিজস্ব ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলেনি। তাই দুর্গন্ধ ও দূষণে আমরা জেরবার হচ্ছি । শুধু তাই নয়, ওই বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও দ্রুত তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আশপাশের একাধিক সরকারি অফিস, থানা সহ অনেক গৃহস্থের বাড়ি-দোকান রক্ষা পাবে না।' তিনি আরও বলেন, “বহুতলটির লাগোয়া জায়গায় লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অপর একটি তিন তলার বিল্ডিং রয়েছে। সেটি আগে ছিল এক গৃহস্থের একতলা বাড়ি। প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে চোখের হাসপাতালের স্বার্থে ওই একতলা বাড়িটিকে তিনতলা বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে কিনা, তারও তদন্ত দাবি করছি।'

আরও পড়ুন- দমবার পাত্র নন কালীঘাটের কাকু! জামিন পেতে তুলকালাম চেষ্টা সুজয়কৃষ্ণের!

এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য লায়ন্স ক্লাব অফ জামালপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, 'আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ মহকুমা শাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, “মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত শুনানি করতে বলেছে। শুনানি হচ্ছে। শুনানিতে হওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।'

kolkata highcourt West Bengal Lions Club Purba Bardhaman
Advertisment