যদিও এই নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গে নারী পাচার ২০১৬ সাল থেকেই ঘটছে। তবে, কোভিড-১৯-এর পরে সংখ্যাটি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এমনটাই বলছেন সমাজকর্মীরা। (এক্সপ্রেস ছবি নেহা বাংকা)
সেই একটি মাত্র ফোন কল তার জীবন বদলে দিয়েছিল। ১৭ বছরের মেয়েটি সুন্দরবন থেকে একটি সরু খাঁড়ি দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছোট এক সীমান্তবর্তী গ্রামে থাকে। অজানা ব্যক্তির ফোন, কিছু মিষ্টি কিছু বচসা মেয়েটিকে প্রেমে পাগল করে দিয়েছিল। সেই প্রেম গাঢ় হয়। আর, তাঁর জীবনের সেই প্রেমিক শেষ পর্যন্ত নিষ্পাপ ওই কিশোরীকে গুজরাটের এক জায়গায় পাচার করে দিয়েছিল। দেখতে দেখতে মধ্যে আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সেই কিশোরী এখন ২৫।
Advertisment
সুন্দরবন প্রায় ৩,৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং উত্তর ২৪ পরগণাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। (এক্সপ্রেস ছবি নেহা বাংকা)
পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রামগুলো বছরের পর বছর ধরে নারীপাচারের জন্য কুখ্যাত। তবে, সমাজকর্মী এবং রাজ্য পুলিশ বলছে যে পাচারকারীরা তাদের স্থান পরিবর্তন করেছে। উচ্চ বেতনের চাকরি দিয়ে নারীকে লোভ দেখানোর পরিবর্তে, পাচারকারীরা এখন শিকারদের সঙ্গে 'প্রেম'-এর খেলা খেলছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। দুর্বল পিছিয়ে পড়া নারীদের নিশানা করছে। তাদের সঙ্গে ওই নারীদের পালিয়ে যেতে উসকাচ্ছে।
Advertisment
পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন প্রায় ৩,৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ অঞ্চল সুন্দরবনের মধ্যে পড়ে। এই অঞ্চলে বসবাস বেশ কঠিন। বঙ্গোপসাগরের নোনা জল স্থানীয়দের কৃষিকাজ এবং দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। সঙ্গে, পাল্লা দিয়ে এখানে বেড়েছে নারী পাচার। এই ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে কাটাখালি এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন (KEYA)। যার কর্ত্রী তানিয়া সুলতানা। এই সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে উত্তর 24 পরগনা জেলার বিভিন্ন গ্রামে যৌন পাচার থেকে রক্ষা পাওয়া নারীদের সাহায্য করছে।
কেন নারী পাচার বাড়ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তানিয়া বলেন, 'এখানে কোনও চাকরি নেই। তাই বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করা শহরে কাজ করেন। তাঁদের সন্তানদের, সাধারণত দাদু-দিদিমা বা আত্মীয়দের কাছে রেখে যান। বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং অনলাইনে পড়াশোনা করার জন্য ফোন দেওয়া হয়। পাচারকারীরা অল্পবয়সী মেয়ে এবং মহিলাদের টার্গেট করার জন্য এই ফোন নম্বরগুলিই ব্যবহার করছে।'