অনুব্রত মণ্ডলের ১ কোটি লটারি জয়ের খবরে শোরগোল পড়েছিল। শুধু তিনিই নয়, জোড়া ফুল বিধায়কের স্ত্রী, পঞ্চায়েতের সদস্যের নিকট আত্মীয়দের ডিয়ার লটারি জয় নিয়ে জোর চর্চা চলে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অধিকারীর অভিযোগ ছিল যে, লটারির মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানিয়ে কালো টাকা সাদা করছেন তৃমূল নেতৃত্ব। দিন কয়েক আগেই গরু পাচার মামলায় ধৃত বীরভূমের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল সভাপতির লটারি জয়ের নেপথ্যের রহস্য ভেদে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই গোয়েন্দা দল। ইতিমধ্য়েই তাঁরা বোলপুর সংলগ্ন এলাকার লটারি দোকানে হানা দিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ চলে লটারির দোকানের মালিককে। সেই সূত্রেই গোয়েন্দাদের নজরে ছিল অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর কন্যা সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিও। তদন্ত এগোতেই এবার সামনে এল লটারি জয় সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সিবিআই সূত্রে খবর- একবার নয়, এর আগেও লটারি জিতে পুরস্কারবাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। এছাড়াও, তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের ব্যাঙ্কেও দু'বার লটারির টাকা পড়েছে। অনুব্রত ও সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে এই তথ্য জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারীরা।
২০২২ সালে ডিয়ার লটারিতে ১ কোটি টাকা জিতেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তার আগে, ২০১৯ সালেও লটারি জিতেছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকা। ধৃত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে এই তথ্য মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
অনুব্রত কন্যা সুকন্যা দু'বার জিতেছেন লটারি। একবার ২৫ লক্ষ টাকা। অন্যবার জিতেছেন ২৬ লক্ষ। অর্থাৎ মোট ৫১ লক্ষ টাকা লটারি বাবদ সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়েছে। এমনটাই সিবিআই গোয়েন্দাদের মাধ্যমে খবর পাওয়া গিয়েছে।
এই তিনবার ছাড়া অনুব্রত ও তাঁর কন্যা আর লটারি জিতেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল। বার বার অনুব্রত ও তাঁর নিকট আত্মীয়রাই কীভাবে লটারি জিতছেন সেটাও স্ক্যানারে রয়েছে সিবিআই আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন- লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে গেল যাত্রীবোঝাই টোটো, ঝুঁকি নিয়ে পার করিয়ে ‘ত্রাতা’ তৃণমূল কাউন্সিলর
ডিয়ার লটারির সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের আঁতাঁত নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেছিলেন, 'ডিয়ার (ভাইপো) লটারির সাথে শাসকদল তৃণমূলের সরাসরি সম্পর্ক আছে একথা আমি বরাবর বলে এসেছি। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ই বেশীর ভাগ লটারি কাটেন তাদের অর্থনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। কিন্তু টিকিট সাধারণ মানুষ কাটলেও লটারির জ্যাকপট পুরষ্কারের অঙ্ক কিন্তু তোলামূলী নেতাদের জন্য সংরক্ষিত। আগেও জানা যায় যে অনুব্রত মন্ডল ডিয়ার (ভাইপো) লটারির প্রথম পুরস্কার; ১ কোটি টাকা জিতেছেন, এখন আবার দেখছি গতকাল তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তর স্ত্রী প্রথম পুরস্কার; ১ কোটি টাকা জিতেছেন। সত্যি তৃণমূল নেতাদের ভাগ্য বটে, ডিয়ার (ভাইপো) লটারির প্রথম পুরস্কার একেবারে বাঁধা।
আসলে এই লটারির আড়ালে পশ্চিমবঙ্গে কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হচ্ছে। এই বিষয়ে গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় শ্রী অমিত শাহ জী কে বিস্তারিত জানিয়ে আমি একটি চিঠিও দিয়েছিলাম। তখন এই সব খবর প্রকাশিত হয় নি।
গোটা পশ্চিমবঙ্গে যেদিকেই আপনি তাকাবেন বাস স্ট্যান্ড বাজার, পাড়ার মোড়ে, দেখবেন একটি ছোটো টেবিল আর চেয়ার সাথে লটারি নিয়ে এজেন্টরা বসে আছে। সাধারন খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেনীর মানুষ রাতারাতি কোটিপতি হবার প্রলোভনে পা দিচ্ছেন, তাদের কষ্টার্জিত অর্থে এই লটারি কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন যা যথেষ্ট উদ্বেগের। আর দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলের এক শ্রেনীর নেতারা সেই অর্থে লাভবান হচ্ছেন। তৃণমূল নেতাদের কালো টাকা সাদা করার পন্থা হলো ডিয়ার (ভাইপো) লটারি।'