বাংলায় ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। তদন্তে নেমেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। যদিও শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে তিনি এখনও এই মামলায় সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি। এর মধ্যেই অনুব্রতর রাজনৈতিক ক্ষেত্র পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে নোটিস পাঠিয়ে সিবিআই তলব করল।
নোটিস পাওয়া অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ওই তৃণমূল নেতার নাম আহমেদ শামস তবরিজ ওরফে অরূপ মির্ধা। তিনি আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ও ভাল্কি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি আউশগ্রামের প্রতাপপুর গ্রামে। এই ঘটনা রবিবার জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অরূপ মির্ধা রবিবার সিবিআইয়ের নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি জানান, সিবিআইয়ের ডেপুটি সুপারিন্টেণ্ডেন্ট কেপি শর্মার পাঠানো ওই নোটিস ই-মেল মারফত তাঁর কাছে এসেছে। নোটিস পাঠিয়ে সিবিআই তাঁকে সোমবার অর্থাৎ আগামিকাল দুর্গাপুরের এনআইটি গেস্ট হাউসে হাজির নির্দেশ দিয়েছে বলে তিনি জানান । পাশাপাশি অরূপ মির্ধা এও বলেন, "কোন মামলায় আমাকে ডাকা হয়েছে তার কিছুই আমি সঠিক বুঝতে পারছি না। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব। তার পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।"
বিধানসভা ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় আউশগ্রামের নামও জড়ায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলে বিজেপি সরব হয়। সেই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে। মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার শাসকদলের নেতা-কর্মীদের ডেকে পাঠাচ্ছে। অরূপ মির্ধা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার এক সিবিআই আধিকারিক তাঁকে ফোন করেন। ফোন করে তাঁর কাছে ই-মেল আইডি চান ওই সিবিআই আধিকারিক। তারপর শনিবার বিকেলে তাঁর ই-মেল আইডি তে সিবিআই ওই নোটিস পাঠায়।
আরও পড়ুন বেশি টিফিনের প্যাকেট না পেয়ে মহিলা বিডিওকে অশালীন কটূক্তি, কাঠগড়ায় তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ
জেলা বিজেপির (পূর্ব বর্ধমান) সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০২১ বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যজুড়ে বিজেপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপর অমানসিক সন্ত্রাস চাালিয়েছে তৃণমূল বাহিনী। তৃণমূলের হামলা ,আক্রমণ ও সন্ত্রাসের জেরে অনেক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকে জখম হয়েছে,আবার অনেকে বাড়ি ছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন। তৃণমূলের সেই সন্ত্রাসের সাত থেকে বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা যেমন রেহাই পায়নি, তেমনই পায়নি আউশগ্রামের বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরাও। কোনও সভ্য দেশে এমনটা হয় না। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই কাদের ডাকবে আর কাদের ডাকবে না সেটা তাদের ব্যাপার।"
সৌম্যরাজবাবু দাবি করেন, "সিবিআই হয়তো কোন ’ক্লু’ পেয়েছে তাই অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আউশগ্রামের তৃণমূল নেতা অরূপ মির্ধাকে নোটিশ করে ডেকে পাঠিয়েছে। নোটিস পেয়েও ওনারা যদি সিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি না হন তাহলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়“।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্দেশ মতো কাজ করছে সিবিআই। তাই ওরা শুধু তৃণমূলের লোকজনকেই নোটিস পাঠাচ্ছে। তবে এইসব করে কিছু লাভ হবে না। । রাজ্যের মানুষ আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভেটেও বিজেপিকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মতোই প্রত্যাখ্যান করবে“।