চন্দননগর মানেই জগদ্ধাত্রী পুজো। একদিকে জগদ্ধাত্রী পুজোর জমকালো আলো, যা দেখার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ ভিড়। এর ঠিক উল্টোদিকে একেবারে অন্যছবি। কচি দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভিনরাজ্যের এক মায়ের বেঁচে থাকার লড়াই। জগদ্ধাত্রীর আলোকে উজ্জ্বল ছত্রিশগড়ের বিলাসপুরের বাসিন্দা কবিতাবাঈ।
চন্দননগরের বিখ্যাত অম্বিকা এ্যাথলেটিক ক্লাব। এখানকার জগদ্ধাত্রী বন্দনার খ্যাতি সুবিদিত। যেমন প্রতিমা,তেমন মণ্ডপ আর আলোকসজ্জা। মণ্ডপের উল্টোদিকে খানিকটা এগিয়েই রাস্তার ধারে নালার উপরে দু'দিকে বাঁশের ঠেকনা ও মাঝে মোটা দড়ি লাগিয়ে চলছে ব্যালেন্সের খেলা। দুই কচি রাজা(৭) ও ফাগুরাম(৩) আপন মর্জিতে দড়ির উপরে অনায়াসে হেঁটে চলেছে। আর তাতেই কড়া নজর মা কবিতাবাঈয়ের। কখনও আবার মায়ের কথা অনুযায়ী মাথার ওপর থালা রেখে দড়ির এপার ওপার করছে দুই খুদে।
সুদূর ছত্রিশগড়ের বিলাসপুর থেকে দুই ছেলেকে সঙ্গে করে হুগলির চন্দননগরে এসেছে কবিতাবাঈ। উদ্দেশ্য, ট্রাপিজের খেলা দেখিয়ে কিছু অর্থ উপার্জন। শুধু কবিতাবাঈই নয়, এসেছে মোট তিনটি পরিবার। কেমন লাগছে এককালের ফরাসী উপনিবেশ চন্দননগর? মুখ খুলতে নারাজ কবিতাবাঈ। এর পিছনে রয়েছে সমাজের দীর্ঘ অবজ্ঞা ও অসম্মান। বানজারা মানেই চোর! অনেকেই তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখেন। তাই নীরব থেকেই প্রতিবাদ করে চলেছেন কবিতাবাঈ। অনেক জোরাজোরিতে শুধু জানালেন, এই পেশা তাদের জন্মগত। একসময় সেও এরকম ট্রাপিজের খেলা দেখাতো। এরপর বাচ্চাদের শিখিয়েছেন।
পুজোটা অনেকের কাছে আনন্দের হলেও এঁদের কাছে কিছু রোজগারের দিশা। পুজো মিটলেই আবার ফিরে যাবেন বিলাসপুর। সেখানে চাষ-আবাদ করবে। এই তিনদিন রাস্তাই তাদের কাছে ঘরবাড়ি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন