মা সাজেন প্রায় ভরি ভরি স্বর্ণলংকারের সাজে। ভক্তি, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস এই তিনের মেলবন্ধনে মা কে জড়িয়ে রাখেন ভক্তরা। মা যে সবার মনস্কামনা পূরণ করেন। চন্দননগর নিচুপটি, চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী মা। যা আদিমা নামে সারা বিশ্বে সমাদৃত। চন্দননগরের প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল এই চাউলপট্টিকে ঘিরেই।
কথিত আছে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী প্রথম এই জগদ্ধাত্রী পুজো চালু করেন। সে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগের কথা। তৎকালীন ফরাসি অধ্যুষিত চন্দননগরে ফরাসি সরকারের দেওয়ান ছিলেন তিনি। জনশ্রুতি কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। এরপর ফরাসি প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে এই চাউল পট্টি এলাকায় তিনি জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন।
প্রথম বারোয়ারি পুজো- তাই তিনি আদিমা। আজ জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমী। গতকাল ষষ্ঠী, সপ্তমী তিথি অনুযায়ী একসঙ্গে পড়ে গিয়েছিল। অষ্টমীর সকাল থেকেই এই আদি মার মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। চাউলপট্টি আদি জগদ্ধাত্রী মা বারোয়ারি র সাধারণ সম্পাদক চন্দন ঘোষ জানান, এই পুজো খুব নিষ্ঠাপূর্ণভাবে করা হয়। এখানে মা'কে দেবী দুর্গা হিসেবে দেখা হয়, তাই দুর্গাপূজার মতোই চারদিন ধরে পুজো হয়। তবে অন্যান্য প্রতিমার সঙ্গে আদিমার প্রতিমার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন অন্যান্য জগদ্ধাত্রী প্রতিমার ডানদিকে হাতি থাকলেও এখানে বাঁদিকে হাতি থাকে।
আরও পড়ুন- জগদ্ধাত্রীর সঙ্গেই ব্যাসদেব ও নারদমুনির আরাধনা, বনেদি বাড়ির এপুজোর পরতে পরতে ইতিহাস
এছাড়াও দেবীর বাহন সিংহের রং এখানে সাদা। অন্যান্য জায়গায় হলুদ থাকে। তিনি জানান, পুজোর দিনগুলোতে ছাগবলী হয়। এছাড়া আমাদের বিশ্বাস প্রতি পুজোতে মা কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটান। ভক্তদের মনোবাসনা পূর্ন করেন। এখানে ধুনোপোড়া, দণ্ডিকাটা ভোগ বিতরণ সবই হয়। ষষ্ঠীর দিন ২০০ কিলো চালের পায়েস ভোগ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া অষ্টমীর দিন ৩০০ কিলো চালের খিচুড়ি এবং নবমীতে সাড়ে তিনশ কিলো চালের পোলাও ভোগ হয়। এই ভোগ বিনামূল্যে ভক্তদের বিতরণ করা হয়। এছাড়া মাকে ভক্তরা যেসব শাড়ি উপহার দেন তা গরিবদের বিলিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের বেনারসিগুলো দুস্থ কোনও মেয়ের বিয়েতে দেওয়া হয়। এছাড়া দশমীতে পাওয়া প্রায় ১ কুইন্টাল ফল চন্দননগর হাসপাতালে রোগীদের দান করা হয়।