‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠল আলোর বেণু’! চলছে অপেক্ষার প্রহর গোনা। হাতে মাত্র আর ক’টা দিন। আর তারপরেই পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনা। মহালয়ার মধ্যে দিয়েই শুরু হয় বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গাপুজোর।
মহালয়া মানেই বাঙালিদের কাছে নস্টালজিক এক অনুভূতি। আগের দিন ধুলো জমে থাকা রেডিও ঝেড়ে-পুছে একেবারে সাফ করে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনি শোনার প্রস্তুতি। ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ। সঙ্গে উৎসবের আনন্দে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার জোর প্রস্তুতি। সকলের মত ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে মহালয়ার এই বিশেষ দিনে রেডিও’তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনি শুনে শুনেই তা রপ্ত করে ফেলেন শেওড়াফুলির বাসিন্দা পেশায় জুতোবিক্রেতা অজয় সাহা। সেই থেকে শুরু। এখন পুজোর আগে তার গলায় মহালয়া শুনতে মানুষের উৎসাহের যেন বিরাম নেই।
চোখ বুঝলেই অজয় যেন হুবহু বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। এমনটাই জানাচ্ছেন পাড়া প্রতিবেশীরা। পুজোর আগে এলাকার একাধিক মণ্ডপে মহিষাসুরমর্দিনি পাঠের ডাক পড়ে। জুতো বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে মহিষাসুরমর্দিনি পাঠ অজয়ের একটা নেশা। জুতো কিনতে আসা অনেক ক্রেতাদেরও মন জয়ে করে নেন মহিষাসুরমর্দিনি পাঠের মধ্যে দিয়ে। এমন কন্ঠে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়ে অজয়ের জুড়ি মেলা ভার।
মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু মহিষাসুরমর্দিনি পাঠের তালিম। এরপর ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে রপ্ত করেছেন ধীরে ধীরে। একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলেও পাঠ করেছেন মহিষাসুরমর্দিনি। ইচ্ছা ছিল রেডিও’ তার এই মহিষাসুরমর্দিনি পাঠের। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। মা-বাবার পাশাপাশি প্রবাদপ্রতিম বেতার ব্যক্তিত্ব বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে রোজই তিনি স্মরণ করেন। অজয়ের মতে, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রই তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি নিজেই রচনা করেছেন জগদ্ধাত্রী স্তোত্র। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ বাঙ্গালির এই প্রবাদ বাক্যকেই একেবারে বাস্তবে পরিণত করে অজয় সকলেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।