তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে ঠাকুরনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর ঘিরে ধুন্ধুমার। রবিবাসরীয় দুপুরে তপ্ত হল ঠাকুরবাড়ি। মতুয়া মহাসংঘের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ, কালো পতাকা দেখালেন তৃণমূলের কর্মীদের। এই পরিস্থিতিতে ঠাকুরবাড়ির মূল মন্দিরে পুজো দিতে পারলেন না অভিষেক। বন্ধ করে রাখা হল মন্দির। পাশের মন্দিরে পুজো দিতে হল অভিষেককে। এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে গেলেন অভিষেক।
এদিন তৃণমূল সাংসদ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আমি ৩ মাস পর ঠাকুরবাড়িতে আসব, দম থাকলে আটকে দেখাক।' উত্তপ্ত মতুয়াগড়ে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তনু ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "উনি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানকার জলের ব্যবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে তৃণমূলকে চমকাচ্ছেন সেই রাস্তাও মুখ্যমন্ত্রীর করে দেওয়া। চাইলে ভিড় ভেঙে মন্দিরে ঢুকতে ৫ মিনিট লাগবে। ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করছেন শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া-মাটিকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। আমার কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না, আমি পুজো যেতে এসেছিলাম।"
এদিন অভিযোগ, জোর করে ঠাকুরনগরের মন্দিরের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় অভিষেকের কর্মসূচি উপলক্ষ্যে তৈরি হওয়া তোরণ। ভিতরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের বলপূর্বক বের করে দেওয়া হয় বলেও খবর। ভিতরে তখন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। বাইরে তুমুল বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের বের করে দিয়েছে। পরে অভিষেক বলেন, 'মতুয়া মন্দির কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আগামী দিনে মানুষ এর জবাব দেবে।'
আরও পড়ুন পঞ্চায়েতের টিকিট বিবাদে অশান্তি গাজোলে, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করল যুব তৃণমূল কর্মীরা
এদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নামে পোস্টার দিয়েছিল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। বিষয়টি নিয়ে এদিন শান্তনু ঠাকুরকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর চাঁচাছোলা জবাব, 'ওঁর পিসি ঠাকুরের নামে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করবে, তা ওঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে নাকি?' গত ফেব্রুয়ারিতে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিকৃত করার অভিযোগে পথে নেমেছিলেন মতুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রীর ভুল উচ্চারণের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। যা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়।
এদিন সেই প্রসঙ্গ টানার পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তীব্র কটাক্ষ করেন শান্তনু। বলেন, "অভিষেক কে? কোন মন্ত্রী ও? বাংলার মন্ত্রী না কেন্দ্রের? এত সাজগোজ হচ্ছে, মন্ত্রী এলেও হয় না, প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছিলেন, তখনও হয়নি। ও কে? সাধারণ সাংসদ। ওঁর লোকসভায় এসব হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে, সাংসদ হিসেবে অভিষেক কে? সূর্যের আলোয় চাঁদ যেমন আলোকিত হয়, ও তাই হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে ও যেমন সাংসদ, আমিও সাংসদ। ভোটের আগে ঠাকুরবাড়িতে এই মুহূর্তে কী আছে?" শান্তনু জানিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলে ঠাকুরবাড়ি গোবরজলে শোধন করা হবে।