scorecardresearch

জেলের কুঠুরিই কেড়েছে ১৭ বছর, নবজন্মে ৭২-এর ‘তরুণের’ বেনজির কীর্তিকে কুর্ণিশ!

এমন কাহিনী কমই শোনা যায়।

Arjun Rajbhar
চোয়াল শক্ত রেখে কঠিন লড়াই অর্জুন রাজভড়ের। ছবি: উত্তম দত্ত।

যাঁরা শাস্তি দিয়েছেন তাঁরাই দিয়েছেন সাহারা। দীর্ঘ জেলজীবন শেষে ঘরে ফিরে ইস্তক বাঁচাল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। আর পাঁচটা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। লড়াইটা কঠিন ছিল তবে তিনি পেরেছেন। না এটা কোনও হিন্দি সিনেমার গল্প নয়। বাস্তবে এই ঘটনাটির সাক্ষী হুগলির চাঁপদানীর মানুষজন। আর গোটা পর্বের পিছনে যাঁর অবদান তিনি হলেন হুগলি জেলা প্রবেশন অফিসার মনোজ রায়।

টাইমমেশিনে চেপে পিছিয়ে যাওয়া যাক প্রায় ২০ বছর। ২০০৪ সালে চাঁপদানীর ফেসুয়াবাগানের বাসিন্দা অর্জুন রাজভড়ের জীবনে নেমে আসে এক অভিশপ্ত রাত। পেশায় গাড়িচালক অর্জুন পারিবারিক একটি কারণ নিয়ে তাঁর মালিকের সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়াঝাটিতে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকদিনের মধ্যে সেই ঝগড়াঝাটি খুনোখুনির পর্যায়ে চলে যায় এবং খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন অর্জুন। প্রেসিডেন্সি জেলে ঠাঁই হয় তাঁর।

দীর্ঘ ১৭ বছর জেলে কাটিয়ে অবশেষে মুক্তি পান অর্জুন। কিন্তু মুক্তি পেয়ে কী করবেন ভেবে কুলকিনারাই পাচ্ছিলেন না। সশ্রম কারাদণ্ডের বিনিময়ে বেশ কিছু টাকাপয়সা জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা দিয়েই বা কী করবেন? আশেপাশের লোকজন তো তখনও তাঁকে এড়িয়েই চলেছেন। এরই মধ্যে জেলা প্রবেশন কাম আফটার কেয়ার অফিসার মনোজ রায় তাঁর ‘মসিহা’ হয়ে দাঁড়ান।

নিজের হাতে সাজানো দোকানে বৃদ্ধ অর্জুন রাজভড়।

তাঁদের কাজই এটা। সংশোধনাগারে কয়েদীরা কতটা সংশোধন হলেন তার ওপর নজর রাখেন তাঁরা। বন্দিদশা থেকে জেলমুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারি বিভিন্ন স্কিমের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করেন তাঁরা। অর্জুনের পাশে ঠিক সেভাবেই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চাঁপদানী পুলিশ ফাঁড়ির পাশে জিটি রোডের ধারে একটি চায়ের দোকান তৈরি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- ঝাঁঝালো রোদে এমাসেই তাপপ্রবাহের আশঙ্কা! ‘হট’ লিস্টে কোন কোন জেলা?

মাসখানেক আগে গড়ে ওঠে অর্জুন টি স্টল। উদ্বোধন করেন স্বয়ং জেলা প্রবেশন কাম আফটর কেয়ার অফিসার মনোজ রায়। বর্তমানে সেই ছোট্ট টি স্টল আজ বহরে বেশ খানিকটা বেড়েছে। চা বিস্কুট থেকে মুড়ি-ঘুগনিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়ও। ভোর তিনটের সময় দোকান খুলে বন্ধ হচ্ছে রাত ১০ টায়। ভিড় সামলাতে ২ জন নতুন কর্মচারী রাখতে হয়েছে।

আর সবই হয়েছে ওই প্রশাসনিক অফিসারদের সহযোগিতায়। তাই বাহাত্তরে দাঁড়িয়েও বৃদ্ধ অর্জুন অবলীলায় বলে চলেন, ‘যতদিন বাঁচবো এই দোকান চালিয়েই বাঁচবো। আমি অতীতকে আর মনে রাখতে চাই না। দোষ করেছিলাম। যাঁরা শাস্তি দিয়েছে তাঁরা আবার সাহারাও দিয়েছেন। এটাই পরম পাওনা। আমি এখন পরিবার নিয়ে সুখে বসবাস করছি। নতুন জীবনদানের জন্য আমি প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ।’

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Chapdani arjun rajbhar opened a shop after spending 17 years in jail