Char-Meghna assembly Nadia Karimpur loksabha Murshidabad: ভোট ওঁদের জীবন বদলাতে পারে না। কারণ, ওঁদের জীবনটা সীমান্তরক্ষী আর কাঁটাতারের ঘেরাটোপে কাটে। ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড- সব নথি থাকলেও ওঁরা যেন আধা ভারতীয়। কারণ, ওঁরা নদিয়া সীমান্তের চরমেঘনা গ্রামের বাসিন্দা। তাই এখানে রাজনৈতিক উত্তেজনাও কোনওদিন ছিল না। আজও নেই। ভোট মানে, এখানে সবাই মিলে অংশগ্রহণ করা একটা উৎসব মাত্র।
এই গ্রামের রাজনৈতিক সীমানাও বড় অদ্ভুত। বিধানসভার বিচারে নদিয়ার করিমপুরের অংশ। আর, লোকসভার বিচারে এটি পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের মধ্যে পড়ছে। গ্রামের বাসিন্দা মাত্র হাজারখানেক। সকলেই হিন্দু। গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার আছে। রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। আর, সেখানেই ভোট দেন এই গ্রামের বাসিন্দারা।
ভারতের স্বাধীনতার বহু আগে, আজ থেকে ২০০ বছর পূর্বে এই চরমেঘনায় নীলচাষের জন্য বিহার, ছোটনাগপুর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল খেতমজুরদের। তাঁরাই চরমেঘনা গ্রামের বাসিন্দাদের পূর্বপুরুষ। আজও হিন্দুপ্রধান এই গ্রামে বাসিন্দাদের জীবিকা কৃষিকাজ। এখানে ধান, পাট, রবিশস্য, সবজি চাষ হয়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই কলেজে শিক্ষালাভ করেছেন। কিন্তু, এই অঞ্চলে যাওয়া আর আসার সময়, বাসিন্দাদের গেটে প্রতিবার ভোটার কার্ড অথবা অন্যান্য সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে বিবাহিত মেয়েরা বাপের বাড়ি থাকলে এবং প্রসূতিদের নিয়ে রাত-বিরেতে হাসপাতালে ছুটতে হলে সমস্যায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন- অভিষেকের কপ্টারে আয়কর হানা! হলদিয়ার সভার আগে রক্ষীদের আটকে রেখে তল্লাশি
কারণ, মাথাভাঙা নদী আর আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিয়ম-কানুন, কাঁটাতারের ওপারে ফেলে দিয়েছে চরমেঘনাকে। তাই বলে কিন্তু, এই অঞ্চল ছিটমহলের অন্তর্ভুক্ত নয়। হোগলবেড়িয়া থানার এই এলাকা, 'অ্যাডভার্স পজেশন ল্যান্ড'। যা, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাতে পঞ্চায়েত পরিষেবা, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা হয়তো মিলছে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছে সীমান্ত বড় কঠিন ঠাঁই। সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসতে কালঘাম ছুটে যায় বাসিন্দাদের। তার মধ্যে আবার গরমকালে শুকনো হয়ে যাওয়া মাথাভাঙা নদী পেরিয়ে ওপারের কুষ্টিয়ার মহিষকুণ্ডি, জামালপুর থেকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। অবাধে লুঠপাট চালিয়ে চলে যায়। না সীমান্তরক্ষী বাহিনী, না পুলিশ, কেউ রক্ষা করতে আসে না!