TMC-Purba Bardhaman: ভোট পরবর্তী হিংসা দাবানলের মতো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এবার সেই হিংসার কবলে পড়েছিল পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির জেলা কার্যালয়। বৃহস্পতিবার তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীরা ইট ও লাঠি নিয়ে বিজেপির জেলা অফিসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। ওই একই সময়ে রায়নায় তৃণমূলের অন্দরের কোন্দলও চরমে উঠেছে। দলেরই এক নেতাকে হুঁশিয়ারি অন্য নেতার।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আবহে সারা দেশে ১৬ জন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু হয়। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা সংঘর্ষ-মারামারিতে আহত হন ১২০০-র বেশি রাজনৈতিক কর্মী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বঙ্গে ৬৯৩ টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। নিহত হয়েছিলেন ১১ জন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, উনিশের লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরেও হিংসা জারি ছিল।
২০১৯ সালে রাজনৈতিক খুনের তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলা। রাজনৈতিক হিংসার একই প্রতিচ্ছবি বঙ্গের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ফুটে ওঠে। এবার ২০২৪ সালের
লোকসভা ভোটের পরেও পূর্ব বর্ধমান সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাথাচাড়া দিয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা।
আরও পড়ুন- Travel: পাহাড়ি গ্রামের চিত্তাকর্ষক শোভায় মন মোহিত হবে! বর্ষায় উত্তরবঙ্গ বেড়ানোর সেরা ঠিকানা এটিই
পূর্ব বর্ধমানের বিজেপি নেতা সুমিত দত্ত বলেন, "তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীরা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে এসে হামলা করে। জেলা সভাপতির গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জেলার বিভিন্ন জায়গার দলের কর্মী-সমর্থকেরা পার্টি অফিসে আশ্রয় নিয়েছে। এদিন হামলার সময়ে আমাদের দলের কর্মীদের দু'টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বাইরে থেকে দলীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। আমাদের কর্মীরা প্রতিরোধ করলে তৃণমূল কর্মীরা পালিয়ে যায়।’
বিজেপি নেতা দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন, “বর্ধমান উত্তর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের বাইক মিছিল হয়। সেই মিছিল শেষে আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করে।''
যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে শাসকদল তৃণমূলের নেতা দেবু টুডু বলেন, "জেলায় বিজেপি সাফ হয়ে গেছে। তাই ওদের তৃণমূল কেন আক্রমণ করবে? বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ঘটনা খতিয়ে দেখছে।" এর পাল্টা বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “জেলার বিভিন্ন জায়গার বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। ভাতারে পানীয় জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের উপর ভরসা আছে। দুস্কৃতীদের গ্রেফতার করার আবেদন আমরা
পুলিশকে জানিয়েছি।"
এদিকে জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে তৃণমূলের হামলা চালানোর অভিযোগ ঘিরে যখন উত্তাল বর্ধমান তখন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে ওঠে রায়নায়। রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া ও রায়না ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বামদাস মণ্ডল গোষ্ঠীর বিবাদ ঘিরে এখন তপ্ত রায়না। রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠকে একে অপরকে হুঁশিয়ারি দেওয়ায় উত্তেজনা বাড়ছে।
বামদাস মণ্ডল হুঁশিয়ারি ছুড়ে দেন রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া গোষ্ঠীর তিন তৃণমূল নেতা শেখ ইসমাইল ওরফে শান্ত, দীপ দত্ত এবং সোমনাথ সোম ওরফে বাপ্পার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, “আমাকে মার্ডার করার জন্যে শান্ত এক মাফিয়াকে টাকা দিয়েছিল। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। এছাড়াও এরা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রায়নায় তৃণমূলকে হারানোর সমস্ত রকম পরিকল্পনা চালিয়ে গেছে। এঁদের আমি ছাড়ব না।"
পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ শান্ত বলেন, "রায়নায় লুটেপুটে খাচ্ছে বামদাস মণ্ডল। শম্পা ধাড়ার সঙ্গে যাঁরা রাজনীতি করে তাঁদের কারও গায়ে এক ইঞ্চি কাঁটার আঁচর লাগলে ওর (বামদাস) শরীরে দশ ইঞ্চি দাগ করো দেব।”