Advertisment

তৃণমূলের হয়েই জঙ্গলমহলে কাজ করবেন জামিনে মুক্ত ছত্রধর

'জঙ্গলমহলের জন্য আমার যা ইচ্ছা তার সঙ্গে দিদির ইচ্ছার মিল রয়েছে। তাই দিদির ওপর আস্থা রেখেই আমি আমার বাকী জীবনটায় কাজ চালিয়ে যাব।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

জামিনে মুক্ত ছত্রধর মাহাতো। ছবি: শাহজাহান আলি

২৮ টি মামলার জট ছাড়িয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর শনিবারই জামিনে মুক্ত হয়েছেন জঙ্গলমহলের এক সময়ের দাপুটে নেতা ছত্রধর মাহাতো। রবিবার ঝাড়গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন তিনি। তবে, রাজনীতি যে ছাড়ছেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জনসাধারণের কমিটির এই নেতা। রাজ্যের শাসক দলের হয়েই কাজ করবেন ছত্রধর মাহাতো। তাঁর বাড়ি ফেরাকে স্মরণীয় করে রাখতে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি বিশাল বাইক ব়্যালির আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisment

২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমীর দুপুরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে সাংবাদিকের ছদ্মবেশধারী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ছত্রধর। সেই দিনই কাঁটাপাহাড়িতে পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি বিস্ফোরণের মামলায় ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ছত্রধরকে অভিযুক্ত করা হয়। কাঁটাপাহাড়ির বিস্ফোরণের মামলায় ২০১৫ সালে ছত্রধর সহ সাত জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল মেদিনীপুর আদালত। পরে সেই মামলায় ছত্রধর সহ চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট একটি মামলায় ঝাড়খন্ড থেকে শনিবার জামিন পেয়েছেন ছত্রধর মাহাতো।

ছত্রধরের বিরুদ্ধে এখনও ১৫টি মামলা বিচারাধীন। জামিনে থেকেই ওই মামলাগুলি লড়তে পারবেন তিনি। সূত্রের খবর গত এক বছর ধরেই ছত্রধর তৃণমূলের ছত্রছায়ায় চলে এসেছিল। বিজেপি নেতা মুকুল রায় নিজে এসে ছাত্রধরকে একবার পদ্ম শিবিরে যোগদানের কথা বলেছিলেন। যদিও তৃণমূলের ইশারায় তা সম্ভব হয়নি বলে খবর। এরপরই ছত্রধরের পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। এরপর থেকেই কাকতালীয়ভাবে একের পর এক মামলায় হয় বেকসুর খালাস, নয়তো জামিন পেতে থাকেন তিনি। জঙ্গলমহলে বিজেপিকে রুখতে ওই অঞ্চলের পুরনো নেতাকে কাজে লাগাতে চলেছে শাসকদল তৃণমূল, রাজনীতির ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে এই কথা।। শনিবার জামিনে ছাড়া পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের প্রশংসা করে ছত্রধর কার্যত সেই জল্পনার অবসান ঘটালেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শনিবার ছত্রধর মাহাতো জামিন পাওয়ার পরই তার কাছে হাজির হয়ে যায় স্ত্রী ছেলে সহ বর্তমান লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো। জঙ্গলমহল আন্দোলনের সময় ছত্রধর মাহাতোর ছায়াসঙ্গী ছিল এই শ্যামল মাহাতো। সেই শ্যামল বর্তমানে তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই কলকাতার একটি লজে শ্যামল মাহাতো ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন ছত্রধর মাহাতোকে। তৃণমূল নেতা শ্যামল মাহাতো বলেন," ছত্রধর মাহাতোকে জেল থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করার জন্য দিদিকে ধন্যবাদ জানাব। এবার থেকে আমরা একসঙ্গে পুনরায় কাজ করব। জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য যে কাজ একসময় করার চেষ্টা করেছিলাম সে কাজ পুনরায় শুরু করব। একটি বাইক রেলি করে দাদাকে সংবর্ধনা দিয়ে আমরা গ্রামে নিয়ে যাব।"

আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক মন্দাকে বিঁধে এবার ফাঁকা হাঁড়ি হাতে মিছিল করবে মহিলা তৃণমূল

ছত্রধর মাহাতোর মুখেও মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রশংসা শোনা যায়। তিনি বলেন, "দিদি কে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ জেল জীবনের পর আমার নতুন একটি জীবন শুরু হতে চলেছে। আমি জঙ্গলমহলের মানুষের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে জেলবন্দি হয়েছিলাম। আমি পুনরায় সেই কাজ শুরু করব। দিদি যা অনেকটাই করে দিয়েছেন। এ জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। দিদির উপর আস্থা রেখেই কাজ করবো। যেহেতু জঙ্গলমহলের আন্দোলনের গোড়া থেকেই দিদি আমার সঙ্গে ছিলেন। জঙ্গলমহলের জন্য আমার যা ইচ্ছা তার সঙ্গে দিদির ইচ্ছার মিল রয়েছে। তাই দিদির ওপর আস্থা রেখেই আমি আমার বাকী জীবনটা কাজ করব। আশা করি মানুষ আমাকে আগের মতই গ্রহণ করবে।"

আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে গেরুয়া ঝড় থামাতে তাহলে কী এবার জোড়া-ফুল শিবিরের বাজি ছত্রধর মাহাতো? আপাত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে।

tmc Mamata Banerjee
Advertisment