ছটে নিয়মভঙ্গ তুঙ্গে, লোক দেখানো বিকল্পও প্রস্তুত

এবছর মঞ্চ, অস্থায়ী শৌচালয়, জলের মধ্যে ঘেরা স্নানের জায়গা, অস্থায়ী ঘাট, সব প্রস্তুত। প্রশাসনের সৌজন্যে "বিকল্প ঘাটের" ব্যবস্থা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি তারাতলা নেচার পার্ক। মায় জনাকয়েক পুলিশকর্মী অবধি মোতায়েন।

এবছর মঞ্চ, অস্থায়ী শৌচালয়, জলের মধ্যে ঘেরা স্নানের জায়গা, অস্থায়ী ঘাট, সব প্রস্তুত। প্রশাসনের সৌজন্যে "বিকল্প ঘাটের" ব্যবস্থা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি তারাতলা নেচার পার্ক। মায় জনাকয়েক পুলিশকর্মী অবধি মোতায়েন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আজ বিকেল থেকেই ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অমান্য করে রবীন্দ্র সরোবরে চলছে ছটপুজো। কার অনুমতিতে, কেউ জানে না। ছবি: শশী ঘোষ

গত দশ বছরে এমনটা দেখেন নি ওঁরা। ওঁরা মানে তারাতলা নেচার পার্কের কর্মীবৃন্দ। হঠাৎ আজ ভোর রাত থেকে সাজ সাজ রব পার্কে। কী, না ছটপুজোর স্নান হবে এখানে। তারাতলা শিল্পাঞ্চলের মাঝ বরাবর একফালি সবুজ এই পার্ক, বয়স আনুমানিক দশ বছর। মাঝারি মাপের জলাশয়, তার মধ্যে বোটিং, প্রচুর গাছগাছালি। আজ পর্যন্ত কেউ শোনেন নি এখানে ছটপুজোর অনুষ্ঠানের কথা। কিন্তু এবছর মঞ্চ, অস্থায়ী শৌচালয়, জলের মধ্যে ঘেরা স্নানের জায়গা, অস্থায়ী ঘাট, সব প্রস্তুত। প্রশাসনের সৌজন্যে "বিকল্প ঘাটের" ব্যবস্থা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি নেচার পার্ক। মায় জনাকয়েক পুলিশকর্মী অবধি মোতায়েন।

Advertisment

publive-image তারাতলা নেচার পার্কের অস্থায়ী ঘাট। ছবি: শশী ঘোষ

publive-image কাল ছটের পুণ্যার্থীদের ব্যবহারের জন্য নেচার পার্কে অস্থায়ী শৌচালয়। ছবি: শশী ঘোষ

Advertisment

কিসের বিকল্প? রবীন্দ্র সরোবরের। যেখানে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুন্যাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যত প্রশাসনের সহায়তায় আজ দুপুর থেকে দেদার চলছে ছটের উৎসব। যা নিয়ে আজ বিকেলে রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আদালতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করতে চলেছেন তিনি।

নিয়মরক্ষার নিষেধাজ্ঞা পালনের স্বার্থেই কি তড়িঘড়ি সেজে উঠল নেচার পার্ক? সেখানকার এক কর্মী জানালেন, "দশ বছরে কোনোদিন দেখি নি এখানে ছটপুজো হচ্ছে। আজ ভোর থেকে ঘাট বানানো শুরু হয়েছে, সঙ্গে বাথরুমও বসেছে।" এত দূরের এই পার্কে আদৌ কোনও পুণ্যার্থী আসবেন পুজো করতে? ওই কর্মীর কথায়, "আমাদের কাছে যা খবর আছে, কাল ভোরবেলা কিছু লোককে এখানে আনা হবে পুজো আর স্নানের জন্য। গাড়ি করে। পুলিশের বড় অফিসারও দেখতে আসবেন আজকে।" এই পর্যন্ত বলার পর তাঁকে মৃদুস্বরে কিছু বলে সরিয়ে নিয়ে গেলেন এক পুলিশকর্মী।

সূত্রের খবর, শুধু নেচার পার্ক নয়, একইভাবে তৈরি হচ্ছে মেটিয়াবুরুজের সুরিনাম জেটি, যেখানে কস্মিনকালে কেউ ছটপুজো দেখেন নি। সেটাও কি এই কারণেই, যাতে কাল ভোরে রবীন্দ্র সরোবরে পুণ্যার্থীদের যে ঢল নামবে, সেখান থেকে কিছু মানুষকে অন্যান্য ঘাটে চালান করে দিয়ে অন্তত সরোবরের পরিবেশ রক্ষার ভান করে প্রশাসনিক পিঠ বাঁচানো যায়?

publive-image রবীন্দ্র সরোবরের ভেতর আইনি সাবধানবানী। ছবি: শশী ঘোষ

মজার ব্যাপার হলো, রাষ্ট্রীয় বিহারী সমাজের প্রধান মণিপ্রসাদ সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "সোমবার নিউ টাউন গ্রীন বেঞ্চে আমরা রবীন্দ্র সরোবর লেকে ছটপুজো করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয় জল নোংরা করা এবং সাজানো বাগান নষ্ট করার অনুমতি কোনভাবেই দেওয়া যাবে না। আমরা কোর্টের নির্দেশ অমান্য করব না। আমাদের সমাজের সকলকে জানিয়ে দিয়েছি, অন্য কোথাও পুজোর ব্যবস্থা করে নেওয়ার জন্য। ছট শেষ হয়ে গেলে আমরা লিখিতভাবে অনুমতি চাইব।" তিনি আরও বলেন, "রবীন্দ্র সরোবর লেকে পুজো বন্ধ করার কারণ পরীক্ষা করে আমাদের দেখতে হবে। সারা বছর জলের কী অবস্থা থাকে এবং ছটের পর কী অবস্থা হয় তা পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাব।"

অর্থাৎ রবীন্দ্র সরোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে ছটপুজোর অনুমতি দেওয়া হয় নি, এবং বিহারী সমাজের কাছ থেকেও সেই বার্তাই গেছে। তাহলে ধরে নিতে হবে, যেসব পুণ্যার্থী আজ বিকেল থেকে সরোবরে স্নান, পুজো, বা শব্দবাজি ফাটানো শুরু করেছেন, তাঁরা সব জেনেই এসেছেন, এবং মঞ্চ, আলো, অস্থায়ী ঘাট ইত্যাদি, যা তাঁরা কেউ তৈরি করেন নি বলে জানিয়েছেন, সেগুলি আপনা থেকেই তৈরি হয়ে গেছে।

সাধারণভাবে এই শহরে বাবুঘাট এবং সংলগ্ন ঘাটগুলিতে ছটের স্নান দেখতে অভ্যস্ত এই শহর। সেখানে যাঁদের যাওয়ার উপায় বা ইচ্ছে নেই, তাঁদের পক্ষে রবীন্দ্র সরোবর হয়ে উঠছিল আকর্ষণীয় বিকল্প। কিন্তু বাধ সাধল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ। যা এখন অমান্য না করে আর উপায় কী?

publive-image রবীন্দ্র সরোবরে ছটের পুজো ও স্নান। কাল ভোর থেকেও দেখা যাবে এই দৃশ্য। ছবি: শশী ঘোষ

পরিবেশবিদরা যাই পদক্ষেপ নিন না কেন, জাতীয় পরিবেশ আদালত নিজেও এক্ষেত্রে কড়া শাস্তি দিতে সক্ষম। অন্তত কাগজে কলমে। পরিবেশ আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বেশ কয়েক কোটি টাকার জরিমানা ছাড়াও তিন বছর অবধি কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সাধারণভাবে অবশ্য পরিবেশবিধি মানা হচ্ছে কিনা, মূলত তা দেখাই এই আদালতের কাজ। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, এমন কিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জানাতে পারে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারির জন্য প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়ে থাকে তারা। এক্ষেত্রে যে নির্দেশ মানা হচ্ছে না, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। এবার দণ্ড কাকে দিতে হয়, সেটা দেখার বিষয়।