রবীন্দ্র সরোবর লেকে ছটপুজোর অনুমতি দেওয়া হবে কী না, তা নিয়ে কাল পর্যন্ত চলছিল ঘোর জল্পনা কল্পনা। এলাকার লোকজন সিকিউরিটির কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছিলেন, "কাল কি এখানে ছটপুজো হবে?" উত্তরে বলা হচ্ছিল, এখনও কিছু জানা যায় নি। প্রশাসনের তরফে এখনও মোটামুটি তাই বলা হচ্ছে। কিন্তু আজ ভোর থেকেই সরোবরে প্রস্তুতির বহর দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, প্রতি বছরের মত ছট রবীন্দ্র সরোবরেই হবে, বেশ ভালোমতোই হবে, এবং প্রশাসনের নাকের ডগায়ই হবে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা চুলোয় যাক।
গতকালই পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, যাঁর উদ্যোগে ২০১৭ সালে পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, এ বিষয়ে বলেন, "আমি নিশ্চিত, এই বছর লেকে ছটপুজো করা হবে না। যদি হয়, তবে আদালতের আদেশের গুরুতর অবমাননা করা হবে এবং বেশিরভাগ কর্মকর্তা আদেশ লঙ্ঘনের জন্য দায়ী থাকবেন। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হ্রদ সম্পর্কে কথা বলেছি এবং তাঁরা আমাকে জানিয়েছিলেন, এনজিটি-র আদেশকে সম্মান করা হবে।"
আজ তিনি বলছেন, "আমি রবীন্দ্র সরোবরে যাচ্ছি। সকাল থেকে অনেক ছবি ও ভিডিও পেয়েছি, জানি যে অনেক জায়গায় নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নিজের চোখে দেখার জন্যই যাচ্ছি। আবার আদালতে যেতে হবে। সেজন্যই তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য যাচ্ছি ওখানে।"
উল্লেখ্য, রবীন্দ্র সরোবরে যে কোনো অনুষ্ঠান বা সমাবেশের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ২০১৭ সালে, লক্ষ্য পরিবেশ সংরক্ষণ। সেই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি মেলার কথা নয়। কিন্তু গত বছর "শর্তসাপেক্ষে" অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এবছরও সরোবরে ইতিমধ্যেই ভিড় জমাতে থাকা পুণ্যার্থীরা জানেন, "ওরকম প্রতি বছর বলে, কিন্তু আমাদের এখানে পুজো করতে দেওয়া হয়।"
ছটের মঞ্চ বাঁধা থেকে শুরু করে অস্থায়ী ঘাটের ব্যবস্থা, জোরালো আলো থেকে শুরু করে জলে নামার জন্য মই, ঘাটতি নেই কোনো কিছুরই। উপস্থিত ভক্তদের দাবি, এসবের কোনো কিছুই তাঁরা সঙ্গে করে আনেন নি, সবই "সরকারি ব্যবস্থা", যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁরা। দেখুন রমন মাহাতো নামে এক পুণ্যার্থীর বক্তব্য।
পুরোদমে ছটের প্রস্তুতি চলছে রবীন্দ্র সরোবরে। উপস্থিত কিছু ভক্তের দাবি, তারা কোনো মই বা আলো আনেন নি, সবই "আগেই রাখা ছিল" pic.twitter.com/jOWBhjTuZ3
— IE Bangla (@ieBangla) November 13, 2018
সূত্রের খবর, এবছরও শর্তসাপেক্ষে পুজো করার অনুমতির আবেদন জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে পিটিশন জমা দেয় বিহারী সমাজ নামের সংগঠন। সেই পিটিশন খারিজ করা হয়। কাজেই আপাতত সরোবরে ছটপুজোর পক্ষে কোনো আইনি সমর্থন নেই। তা সত্ত্বেও প্রশাসন এবং পরিবেশ আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কিভাবে প্রস্তুতি চলছে, সেটাই রহস্য। চাইলে আদালতের এই অবমাননা কি বন্ধ করতে পারে না প্রশাসন?
যাঁরা পুজো করবেন, তাঁদের অবশ্য বক্তব্য, এমন কিছু করা হবে না যাতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। যেমন বললেন আজকের পুজোর এক পুরোহিত অর্জুন সিং।
"পুজোর সময় আমরা এমন কিছু করি না যাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে।" এমনটাই বলছেন পুজোর পুরোহিত অর্জুন সিং। pic.twitter.com/ylRCpU2C5f
— IE Bangla (@ieBangla) November 13, 2018
গতকাল, ১২ নভেম্বর, এ বিষয়ে সরোবর থানার এস আই তন্ময় ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, "আমাদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট আদেশ এসে পৌঁছোয়নি। এখনও আলোচনা চলছে।" লেকের নিরাপত্তা রক্ষীরাও একই কথা জানান। তফাৎ এইটুকুই, যে তাঁরা বলেছিলেন, "গত বছর আগে থাকতেই নির্দেশ এসে গিয়েছিল। এবারে এখনও কিছু জানা যায়নি।"
নিরাপত্তা রক্ষীরা আরও বলেন, "দুবছরে যা নোংরা হওয়ার কথা লেক, তা একদিনে হয় এখানে ছটপুজো করলে। যা পরিষ্কার করতে তিন মাস সময় লেগে যায়।" একজন লেক সাফাই কর্মী বলেন, "মানও নেই, হুঁশও নেই, পরিষ্কার করা আমাদের কাজ, আমরা করি, কিন্তু নোংরা করা কি ওঁদের কাজ? এই লেক পরিষ্কার রাখতে এই ধরনের উৎসব না হওয়াই উচিত।"