রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার দিনই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা চালু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে তিনি এই ব্যবস্থা চালু করেন। এই ব্যবস্থায় একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, যার নম্বর হল ৯১৩৭০৯১৩৭০। এই নম্বরে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে ফোন করা যাবে। নিজের সমস্যার কথা সরাসরি জানানো যাবে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কল সেন্টারে। সেই সমস্যা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে রাজ্য প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস 'দিদিকে বলো' ব্যবস্থা চালু করেছিল। তবে, সেটা ছিল দলগত ব্যবস্থা। কিন্তু, এবার যা করা হল- সবটাই রাজ্য সরকারের ইমেজ বাড়ানোর লক্ষ্যে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যবাসীর জন্য নানারকম প্রকল্প চালু করেছে। সেই সব প্রকল্প যাতে দ্রুত জনসাধারণের কাছে পৌঁছয়, সেজন্য চালু করা হয়েছে দুয়ারে শিবির কর্মসূচিও। কিন্তু, তারপরও বহু মানুষের নানারকম সমস্যা থেকে যাচ্ছে। যা মেটাতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তো বটেই।
দলগতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, যাতে তাঁর ইমেজকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের যা ক্ষোভ রয়েছে, তা এভাবে দূর করা সম্ভব বলে তৃণমূল সুপ্রিমোর ধারণা। অতীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক হানাহানি দেখেছে রাজ্যবাসী। সেই সব নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জিতলেও দলনেত্রী পুরোপুরি খুশি হতে পারেননি। কারণ, তাতে জনসমর্থনের থেকে পার্টিকর্মীদের পেশির জোর বেশি করে ফুটে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান আগামী দিনের কথা ভেবে জনসমর্থনের জোরে দলকে জেতাতে। সেকথা মাথায় রেখে জনসাধারণের সমস্যা দূরীকরণকেই তিনি পাখির চোখ করেছেন। যার অংশ এই 'সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী' ব্যবস্থা।
এর আগে অবশ্য রাজ্যে প্রশাসনের তরফে এমন ধরনের ব্যবস্থা চালু করে নজির গড়েছে কলকাতা পুরসভা। 'টক টু মেয়র'-এর মত এই একফোনে মেয়রের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ব্যবস্থা রীতিমতো দাগ কেটেছে সমাজের বিভিন্ন মহলে। যা দেখে শিলিগুড়ি পুরসভাও এভাবে সরাসরি মেয়রের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা চালু করেছে। এবার পুরনির্বাচনের ঘোষণার দিনই তাই তেমনই ব্যবস্থা চালু করল নবান্ন। কারণ, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতিতে এবং শাসক দলের নেতাদের একাংশের কাজকর্মে অসন্তোষের পরিমাণ নেহাত কম নয়।
নতুন এই ব্যবস্থা চালু করে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘নবজীবনের যাত্রাপথে দাও দাও এই বর হে হৃদয়েশ্বর- আজ আমার প্রিয় বাংলা এবং প্রাণাধিক প্রিয় বঙ্গবাসীর জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। আজকের এই বিশেষ দিনে আমি নবান্ন সভাঘর থেকে কেষ্টপুর সেতু-২ উদ্বোধন করলাম, যা সল্টলেক এবং নিউটাউনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করবে। এছাড়াও, আজ এক বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা করলাম, যার মাধ্যমে আমার রাজ্যবাসীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে উঠল। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী নামের এই কর্মসূচির মাধ্যমে আপনারা আমার থেকে মাত্র একটি ফোনের দূরত্বে।'
এরপরই ৯১৩৭০-৯১৩৭০ ফোন নম্বর ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই নম্বরে ফোন করে আপনারা আমায় আপনাদের যাবতীয় অভাব-অভিযোগ, মতামত জানাতে পারবেন। সপ্তাহে সোমবার থেকে শনিবার, মোট ছ’দিন, সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত এই লাইন খোলা থাকবে। আপনাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে আমি বদ্ধপরিকর। আমি আশাবাদী এই উদ্যোগের ফলে আমার আপামর রাজ্যবাসীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও গাঢ় হল। আপনাদের সেবাই আমার পরমধর্ম। আপনাদের হাসিমুখ আমার জীবনের প্রাণভোমরা। আপনাদের এই সুখের জন্য আমি আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়ে যাব, এমনটাই প্রতিজ্ঞা আমার। জয় হিন্দ! জয় বাংলা!'