Advertisment

শিশুদের জ্বরে তুমুল আতঙ্ক উত্তরবঙ্গে, সকাল থেকে মৃত ২

দিন কয়েক কেটেছে। কিন্তু রেহাই মিলছে না। জলপাইগুড়িতে একের পর এক শিশু জ্বরে আক্রন্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
child dies of fever in jalpaiguri northbengal

সন্তানহারা অভিভাবক। ছবি- সন্দীপ সরকার

দিন কয়েক কেটেছে। কিন্তু রেহাই মিলছে না। জলপাইগুড়িতে একের পর এক শিশু জ্বরে আক্রন্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। এর মধ্যেই জ্বরে মঙ্গলবারই এক ছয় বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবারও ঘটল প্রাণহানির ঘটনা। জ্বরে ভুগে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। ফলে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বেড়েছে। এইসব শিশুরা কোভিড আক্রান্ত নয় বলেই দাবি উত্তরবঙ্গ জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি ডাঃ সুশান্ত রায়ের। তবে, জ্বরে আক্রান্তদের লালার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Advertisment

উত্তরবঙ্গে গরম কমতেই শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে উত্তরের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলায়। এই জেলাগুলির প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের শিশুবিভাগই ভর্তি জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসায়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায়। জানা গিয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে জ্বরের প্রকোপ। শিশুরা মূলত হাসপাতালে আসছে সাধারণ জ্বর, সর্দিকাশি, খিঁচুনি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যাথা, পাতলা পায়খানা উপসর্গ নিয়ে। ওষুধ খেয়েও জ্বর নামছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন করোনা ভেবে।

গত ২৪ ঘন্টায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। মোট মৃতের সংখ্যা তিন। করোনার পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আসা প্রতিটি শিশুরই ডেঙ্গি, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস, চিকুনগুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাসেরও পরীক্ষা চলছে। জ্বরে আক্রান্ত প্রত্যেকটা শিশুই ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।  

জলপাইগুড়ি জেলায় জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের একটি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দলকে পাঠানো হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। জলপাইগুড়ি জেলার বিশেষ করে ধুপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি ও হলদিবাড়ি এলাকায় শিশুদের  মধ্যে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। জলপাইগুড়ির ১০ শিশুর লালার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত ৬ মাসের শিশুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও তার ময়না তদন্ত করা হয়েছে মৃত্যুর কারণ খোঁজার জন্য। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত ৫১ টি শয্যা। সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু।

জলপাইগুড়ি জেলার মতই পরিস্থিতি ভয়াবহ আলিপুরদুয়ার জেলায়। আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ গিরীশ চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুরা ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে। বেডের সংখ্যার তুলনায় জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই জেলার হাসপাতালগুলিতে একই বেডে দুটি শিশুকে রেখে চিকিৎসা চলছে। কোচবিহার জেলায় মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি রয়েছে মোট ৮৪ টি শিশু। এরা প্রত্যেকেই জ্বর সহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি। এ জেলার জ্বরের প্রকোপ বেশি মেখলিগঞ্জে।

এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি ডাঃ সুশান্ত রায় বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর শিশুদের জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মারাত্মক কিছু নয়। আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় নেই। এই সময় শিশুদের ভাইরাল ফিভার হয়ে থাকে৷ তবুও বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। যেখানে যেখানে অতিরিক্ত বেডের প্রয়োজন সেই সব হাসপাতালে বাড়ান হয়ে বেডের সংখ্যা। তবে জ্বরে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুকেই করোনা টেস্ট সহ ডেঙ্গি, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস, চিকুনগুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস টেস্ট করা হয়েছে।' জ্বরে আক্রান্তরা এখনও করোনা নেগেটিভ হলেও ছয়জনের দেহে স্ক্রাব টাইফাস, এক জনের শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস, সাত জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

শিশুদের জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা সব চাইতে বেশি জলপাইগুড়ি জেলাতে। আজ সকাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৬০ টি শিশু, কোচবিহারে ১২৬, আলিপুরদুয়ারে ১৫০ এবং দার্জিলিং জেলায় সংখ্যাটা ৯৭।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

north bengal Jalpaiguri Unknown Fever
Advertisment